দেব গোস্বামী, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের কোপাই নদীর তীরবর্তী গ্রাম খেজুরডাঙা। আগে বর্ষা এলেই বানভাসি হত গোটা গ্রাম। প্রতি বছর ভেসে যেত ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশু-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। দীর্ঘ সময় গ্রামে বিদ্যুৎও ছিল না। সেসময় জাঁকজমক করে কোনও পুজোর কথা ভাবতেই পারতেন না খেজুরডাঙাবাসী। তাতে কী! মোমবাতি ও হ্যাচাকের আলোতে অল্প খরচে গ্রামের মহিলারা শুরু করেন লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা। কথিত আছে, তার পরই নাকি ধীরে ধীরে গ্রামের দুর্দশা কমতে থাকে। সেই থেকেই গ্রামে শুধু দেবী লক্ষ্মীর পুজো হয়। এটাই গ্রামের মানুষের কাছে প্রধান এবং একমাত্র উৎসব।
গ্রামের বেশিরভাগই কৃষক পরিবার। শস্যের দেবীকেই আরাধ্য দেবী বলেই মনে করেন তাঁরা। আজও গ্রামের ২৫টি কোড়া সম্প্রদায় ভুক্ত পরিবারের পুজো একটাই। কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে গ্রামের কোনও বাড়িতে আলাদা করে ধনদেবীর পুজো হয় না। গ্রামের একটাই পুজো সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো।
নির্মল কোড়া, সুমন্ত কোড়ারা জানান, “একটা সময় গ্রামের কারওর সামর্থ্য ছিল না দুর্গা বা কালীপুজো করার। তাই বাধ্য হয়ে মা-ঠাকুমারা অল্প খরচে লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন করেন। সেই থেকেই হয়ে আসছে কোজাগরী পূর্ণিমায় মা লক্ষ্মীর আরাধনা।” বাঁশ পুঁতে মণ্ডপ করা থেকে শুরু করে পুজোর সমস্ত কাজ করেন গ্রামবাসীরাই। লক্ষ্মী প্রতিমা আসে স্থানীয় গোয়ালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পীর থেকে। গ্রামবাসীরা বলছেন, “এই সময় আত্মীয়-স্বজন যে যেখানে থাকেন, সকলে গ্রামে ফিরে আসেন। পুজোর দিন মা লক্ষ্মীকে তুষ্ট করতে সকলেই ব্যস্ত থাকেন। লক্ষ্মীকে খুশি করতে তাঁর প্রিয় নারকেলের নানা মিষ্টি-সহ খিচুড়ি, লুচি, সুজি ভোগ দেওয়া হয়।” গোটা গ্রামে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোই বড় উৎসব।