এই সময়: আকাশ কালো করে মেঘ ঘনাচ্ছিল দুপুর থেকেই। বুধবার সন্ধের আগেই একেবারে বর্ষাকালের মতো বৃষ্টি শুরু হলো দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। সঙ্গে কানফাটানো বাজের আওয়াজ আর চোখ-ধাঁধানো বিদ্যুৎচমক। দক্ষিণবঙ্গে নতুন করে বর্ষার কথা মনে পড়িয়ে দেওয়া এই বৃষ্টির নেপথ্য কারণ অবশ্য দেড় হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে — বঙ্গোপসাগরে।
বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেওয়া নিম্নচাপের সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি জায়গা পরিবর্তন করে আরও কিছুটা উত্তর-পশ্চিমে সরে গিয়েছে নিম্নচাপ। বুধবার মৌসম ভবন যে বুলেটিন প্রকাশ করেছে, তার ভিত্তিতে বলা যায়, ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে ওই নিম্নচাপ চেন্নাই উপকূলের দিকে এগোচ্ছে।বুধবার বিকেলে সেটি দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল থেকে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। আবহবিদদের অনুমান, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের আগেই নিম্নচাপটি দেশের মূল ভূখণ্ডে ঢুকে পড়বে। দূরত্ব সত্ত্বেও শক্তিবৃদ্ধির জন্যই মঙ্গলবার থেকে তামিলনাডু, পুদুচেরি, অন্ধ্রপ্রদেশের দক্ষিণ ভাগ এবং কর্ণাটকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
চেন্নাইয়ের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই গভীর নিম্নচাপের প্রভাবেই বুধবার সকালের দিকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা দফায় দফায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিতে ভিজেছে। বৃষ্টির সঙ্গী হয়ে এসেছে বজ্রপাত ও বিদ্যুৎচমকও।
তামিলনাডু থেকে দক্ষিণবঙ্গের দূরত্ব প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার। তবে বিপুল এই দূরত্বও গভীর নিম্নচাপের প্রভাব থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারেনি। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার আকাশ ক্রমশ মেঘে ঢেকে যেতে শুরু করেছিল। বুধবারও বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়ে গিয়েছিল বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি। তার জের আরও বেড়েছিল সন্ধেয়।
বাংলার অবস্থা যে এমনটা হবে, সেই পূর্বাভাস দিয়েছিল আলিপুর হাওয়া অফিস। বুধবার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলেও ১৯ অক্টোবরের আগে পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের ১৫টি জেলারই বাসিন্দাদের দীর্ঘক্ষণ মেঘমুক্ত নীল আকাশ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। মাঝে মাঝেই মেঘের আস্তরণে ঢাকা পড়বে আকাশ। হাওয়া অফিস থেকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করা হয়েছে বজ্রবিদ্যুৎ সম্পর্কে। রবিবার থেকে অবশ্য পরিস্থিতি বদল হওয়ার সম্ভাবনা।
বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপটি এখন শক্তি সঞ্চয় করে চেন্নাই উপকূলের দিকে এগোচ্ছে, সেই নিম্নচাপই পুজোর সময়ে ঘূর্ণাবর্ত অবস্থায় ছিল। তখন সেটি বাংলার আরও অনেকটা কাছে ছিল। সেই কারণেই আবহবিদরা আশঙ্কা করেছিলেন পুজোর দিনগুলোয় বৃষ্টি হতে পারে। যদিও শেষ পর্যন্ত পুজো মোটের ওপর শুকনোই ছিল। এরপর ১৩ অক্টোবর বাংলার আকাশ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পুরোদস্তুর বিদায় নিয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন আবহবিদরা।
মৌসম ভবন বুধবার ইনস্যাট থ্রি-ডি ইমেজারি রেডারের যে ছবি প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের ওপর বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন মেঘের আস্তরণ রয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরের বাংলা ও ওডিশা-সংলগ্ন এলাকার বেশির ভাগটাই মেঘশূন্য। সুতরাং নিম্নচাপের প্রভাবটুকু কেটে গেলেই হয়তো বাংলায় শীত পড়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে যাবে।