এই সময়, আসানসোল ও কাটোয়া: কুলটির বেনা ও কাটোয়ার বিষ্ণুপুর— দুই বর্ধমানের এই দু’টি গ্রামের মধ্যে দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটারেরও বেশি। ভৌগোলিক ভাবে দুই গ্রামে কোনও মিল না থাকলেও মিল রয়েছে লক্ষ্মীপুজো ঘিরে। ধনদেবীর আরাধনায় দু’টি গ্রামেই শোনা যায় ‘ঘরে ফেরার গান’। উদ্যাপন হয় ঘরের লোকেদের ঘরে ফেরার।কুলটি থানা এলাকার জিটি রোডের কাছে রয়েছে বেনা গ্রাম। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় আড়াই দশক আগে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় সমস্ত পরিবার। এখন গ্রামে পড়ে রয়েছে ভাঙাচোরা কয়েকটি ঘরবাড়ি। আর রয়েছে একটি লক্ষ্মীমন্দির। যা এখন নতুন করে সাজানোও হয়েছে। সেই মন্দিরের টানেই প্রতিবছর লক্ষ্মীপুজোর দিন গ্রামে ফিরে আসেন গ্রামের পুরোনো বাসিন্দারা।
তাঁদের মধ্যেই একজন শান্তিরঞ্জন মাজি বলেন, ‘এ দিন সবাই একসঙ্গে হয়ে মন্দিরে ধুমধাম করে পুজো করি। পুজো শেষে ভোগপ্রসাদ খেয়ে আবার যে যার বাড়ি ফিরে যাই। কেউ কেউ রাতে মন্দিরে থেকে যান অবশ্য। কিন্তু পরদিন ফের গ্রাম ফাঁকা পড়ে থাকে। আবার সকলের সঙ্গে দেখা হয় এক বছর পর। এ ভাবেই চলছে।’
আবার লক্ষ্মীপুজোতেই দুর্গাপুজোর স্বাদ মেটান কাটোয়ার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দারা। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নানা রকম থিমের মণ্ডপ তৈরি হয় গ্রামে। লক্ষ্মীপুজোয় চারদিন ধরে গ্রামে উৎসব চলে। এখানেও হয় বাড়ি ফেরার উদ্যাপন। জানা গিয়েছে, গ্রামের বেশির ভাগ যুবকই সোনারুপোর কাজের জন্য সারাবছর থাকেন কলকাতা বা দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো ভিন রাজ্যে। দুর্গাপুজোতেও তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেন না। লক্ষ্মীপুজোয় গ্রামে ফিরে আনন্দ করেন।
এ বছরও লক্ষ্মীপুজোয় গ্রামে এসেছেন অসীম বিশ্বাস, উজ্জ্বল সরকার, সুদেব সরকাররা। তাঁদের কথায়, ‘পুজোয় কাজের প্রচুর চাপ থাকে। বাড়ি ফিরতে পারি না। তাই লক্ষ্মীপুজোয় চার দিন ধরে সেই আনন্দ পুষিয়ে নিই।’ এ বার দেড় লক্ষ টাকা বাজেট নিয়ে নানা মডেল দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছে বিষ্ণুপুরের ইয়ংস্টার ক্লাব। গ্রামের আর এক ক্লাব গিনি স্টারের এ বারের থিম ‘অকাল বোধন’। কাপড়ের মাধ্যমে নানা নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপে৷ বাজেট সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। পিছিয়ে নেই গ্রামের নাগিন স্টার, আমরা ক’জন ক্লাবও।