• বহরমপুরে শ্যুটআউট, প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল নেতার মৃত্যু
    বর্তমান | ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: সাতসকালে শ্যুটআউটে বহরমপুরে প্রাক্তন এক তৃণমূল নেতার মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম প্রদীপ দত্ত (৪৫)। বাড়ি রাধারঘাট-১ পঞ্চায়েতের গোয়ালজান নাথপাড়ায়। বুধবার সকালে তিনি প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। বাইকে করে দুই দুষ্কৃতী এসে তাঁকে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে খুন করে। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। প্রদীপবাবু বহরমপুর ব্লকের তৃণমূলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি ছিলেন। তারও আগে তিনি কংগ্রেসের উপপ্রধান ছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিলেন। ইদানীং জমি বেচাকেনা ও প্রোমোটারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই কারণেই তাঁকে খুন করা হল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। 

    বহরমপুর থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, বাইক করে দুই দুষ্কৃতী এসে গুলি চালিয়েছে। স্থানীয় একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা আততায়ীদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছি। কী কারণে এই খুন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকাল ৬টা নাগাদ নিজের গ্রামের রাস্তায় হাঁটছিলেন প্রদীপবাবু। ঘটনাস্থলের পাশে একটি সিমেন্টের দোকানে থাকা সিসিটিভি ফুটেছে দেখা যাচ্ছে, ফাঁকা রাস্তার মাঝ বরাবর হাঁটছিলেন প্রদীপবাবু। দুই দুষ্কৃতী হেলমেট পরা অবস্থায় পিছন দিক থেকে বাইক নিয়ে এসে তাঁর সামনে দাঁড়ায়। বাইকের পিছনে থাকা দুষ্কৃতী নেমে প্রদীপবাবুকে ধাওয়া করে। এক সময় প্রদীপবাবু রাস্তার ধারে ফুটপাতে পড়ে যান। তখন পিস্তল উঁচিয়ে ওই দুষ্কৃতী বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে। তারপর বাইক চালক নেমে এসে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। প্রদীপবাবু লুটিয়ে পড়লে বাইকে চেপে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় প্রদীপবাবুকে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিস। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

    মৃতের ছোট বোন সীমা মণ্ডল বলেন, দাদা শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিল। দাদা কখনও কারও ক্ষতি করেনি। এলাকায় ওর হার্ডওয়্যারের দোকান রয়েছে। ওই ব্যবসা তো আমার বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসছে। কে, কেন ওকে খুন করল আমরা বুঝতে পারছি না। 

    প্রদীপবাবুর বন্ধু দিলীপকুমার দাস এদিন তাঁর সঙ্গেই হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ প্রদীপ আমাকে ফোন করে ডাকে। আমরা প্রায়দিন একসঙ্গেই প্রাতঃভ্রমণ করতাম। এদিন কিছুটা হাঁটার পর আমি বাড়ি ঢুকে ব্যায়াম করছিলাম। তখন খবর পাই, প্রদীপকে কেউ গুলি করেছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

    স্থানীয় বাসিন্দা মন্টু দেবনাথ বলেন, আমরা দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। প্রদীপবাবুকে হেঁটে যেতে দেখে একবার ডাকলাম। উনি বললেন, এসে চা খাব। কিছুক্ষণ পরেই দু’টি বাজি ফাটার মতো আওয়াজ পেলাম। তারপর শুনি, ওকে গুলি করেছে। হেলমেট পরা অবস্থায় দু’টি ছেলে বাইক নিয়ে এই কাজ করেছে। 

    স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য রাজীব হোসেন বলেন, প্রদীপবাবু আগে সক্রিয়ভাবে তৃণমূল করতেন। তবে ইদানীং দলের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না। ব্যবসা নিয়ে থাকতেন। সুবিধা-অসুবিধায় আমাদের কাছে আসতেন। অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল আমার সঙ্গে। এদিনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। পুলিস তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করুক। 

    (বাঁদিকে) নিহত তৃণমূল নেতা। (ডানদিকে)  জনরোষে পুড়ছে গাড়ি। 
  • Link to this news (বর্তমান)