১২০ বছর বাঁচতে চান মন্মথবাবু কেক কেটে ১০৭তম জন্মদিন পালন
বর্তমান | ১৭ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, ঘাটাল: টিভি বা নাতি-নাতনিদের স্মার্টফোনে কেক কেটে মোমবাতি জ্বেলে জন্মদিন পালন করতে দেখেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর কোনওদিন ওইভাবে জন্মদিন পালন করা হয়নি। তাই বৃদ্ধের আবদার মেনে কেক কেটে মোমবাতি জ্বালিয়ে দাদুর ১০৭তম জন্মদিন পালন করলেন নাতি-নাতনিরা। বুধবার পুরোপুরি উৎসবের আমেজে নিজের জন্মদিন পালন হতে দেখে বেজায় খুশি দাসপুর-২ ব্লকের পশ্চিম পলাশপাইয়ের বাসিন্দা মন্মথ মাজি।
পণ্ডিতরা বলে গিয়েছেন বয়স নিয়ে অতশত ভাবার কোনও কারণ নেই। বয়স তো একটা সংখ্যা মাত্র। মন্মথবাবুকে না দেখলে এই প্রবাদের সারমর্ম বুঝে ওঠা মুশকিল। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে রেশনকার্ডে তাঁর বয়স ছিল ৯৪ বছর। সেই হিসেবে এখন ১০৭ চলছে। এই বয়সেই দিব্যি হাঁটাচলা করতে পারেন। বাথরুমে যাওয়া, স্নান করা থেকে নিজের ব্যক্তিগত সব কাজ নিজেই করে নিতে পারেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাড়ায় আড্ডাতেও অংশ নেন। বৃদ্ধের এক প্রতিবেশী প্রভাকর মাজি বলছিলেন, ‘বৃদ্ধের মানসিক জোর দেখলে আমরাই অবাক হয়ে যাই। হাঁটা-চলার গতি একটু মন্থর হলেও সব কিছুতেই বেশ সক্রিয়।’ এক সময় পেশায় ঘরামি ছিলেন মন্মথবাবু। অর্থাৎ, ঘরের ছাউনি দেওয়ার কাজ করতেন। দু’টি বিয়ে করেছেন। দু’পক্ষের মিলিয়ে পাঁচ সন্তানের জনক তিনি। প্রথম স্ত্রী কমলাদেবী বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গিয়েছেন। দ্বিতীয় স্ত্রী গীতা মাজি জানান, তাঁর স্বামীর মতো মানুষই পাওয়া ভার। এই বয়সেও গীতাদেবীকে চোখে চোখে রাখেন মন্মথবাবু। পরিবারের সবার খেলাল রাখেন। ভীষণ শান্ত স্বভাবের। ঝগড়াঝাটি মোটেও পছন্দ করেন না।
বছর দুই আগে মন্মথবাবুর নতুন দাঁত বের হয়। ঘটা করে অন্নপ্রাশন করা হয়। এবছর তিনি বায়না ধরেন কেক কেটে এবং মোমবাতি জ্বালিয়ে জন্মদিন পালন করার। নাতিদের মধ্যে শুভঙ্কর মাজি, সুদীপ মাজি, সন্দীপ মাজিরা বলেন, ‘দাদুর আবদার আমরা ফেলতে পারিনি। তাই তাঁর ইচ্ছেকে মান্যতা দিতেই জন্মদিনের আয়োজন করতে হয়।’ এদিন বৃদ্ধ নিজেই ছুরি নিয়ে কেক কেটে নেন। তাঁর সামনে ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’ ধ্বনি দিয়ে তাঁকে উৎসাহিত করেন নাতি, নাতনি ও নাত বউয়েরা। দুপুরে ছিল ভুরিভোজের ব্যবস্থা। তবে শুভঙ্কর জানালেন, দাদুর ১০৭ তম জন্ম দিনে অতিথিদের সেভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বাড়ির সদস্যদের নিয়েই অনুষ্ঠানটি সারা হয়েছে।
বৃদ্ধের সৌজন্যে মাজি পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ২৪ জন। ওই সংখ্যার মধ্যে দুই মেয়ের নাতি-নাতনিরাও রয়েছেন। বৃদ্ধ জানান, ছোটবেলায় তাঁর জন্ম দিন পালন করা হতো না। আজ এভাবে জন্মদিন পালন করায় তাঁর বেশ ভালো লাগছে। সবার ভালোবাসা নিয়ে তিনি এই ভাবে আরও কয়েকটা জন্মদিন পালন করতে চান। ১২০ বছর পার করার তাঁর খুবই ইচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র