• পানের রপ্তানি কমে যাওয়ায় বিপাকে ঝুড়ির কারিগররা
    বর্তমান | ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, করিমপুর: করিমপুর এলাকায় পানের উৎপাদন কমে যাওয়ায় পান রপ্তানিও কমে গিয়েছে। ফলে পান বোঝাই করার জন্য যারা আগে ঝুড়ি তৈরি করত এখন তারা বিপাকে পড়েছে। ঝুড়ি বোনার কাজ হারিয়ে শিকারপুরের নন্দলালপুরের অনেকেই এখন ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। আবার কেউ অন্য কাজ বেছে নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছর দশেক আগেও এই গ্রামের ৪০টি পরিবারের পুরুষ মহিলা মিলিয়ে প্রায় দু’শো সদস্য বাঁশের ঝুড়ি বোনার কাজ করত। তখন ভালো রোজগার হওয়ায় সংসার চালাতেও গ্রামের কারুর কোনও অসুবিধা হতো না। কিন্তু এলাকার পানের চাষ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে পান রপ্তানির জন্য ঝুড়ির চাহিদা কমতে থাকে। আর তারপর থেকেই সেই সমস্ত মানুষ কাজ হারান। নন্দলালপুর গ্রামের জসিম শেখ বলেন, ঝুড়ি বোনার কাজ কমে যাওয়ায় গ্রামের বহু মানুষ এখন অন্য কাজ করছেন। কেউ ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন, পেটের তাগিদে অনেকেই আবার দিনমজুর বা টোটো চালাচ্ছেন। এখানকার উৎপাদিত পান প্যাকিং করে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর জন্য তখন প্রতিদিন কয়েক হাজার ঝুড়ি দরকার হতো। সেই ঝুড়ির চাহিদা পূরণ করতে এই গ্রামের সকলে তৈরি করতেন। আমি নিজেই সপ্তাহে প্রায় এক হাজার  ঝুড়ি সরবরাহ করতাম। অথচ বর্তমানে সেই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে একশোর নীচে। এখন ঝুড়ির চাহিদা না থাকায় কয়েকজন অনিয়মিত ঝুড়ি তৈরি করেন তাতে কারো সংসার চলে না। তাঁর অভিযোগ, এলাকায় ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। ঋণ নিয়ে একটি টোটো কিনলেও যাত্রী না  হওয়ায় ঋণের কিস্তি দিতেও গাল ঘাম ছুটে যাচ্ছে। ওই গ্রামের ছাত্তার শেখ জানান, আগে পান উৎপাদনে অনেক বেশি ছিল। তখন পরিবারের সকলে দিনরাত ঝুড়ি তৈরি করত। সেই সময়  ১২০টাকার একটি বাঁশ থেকে প্রায় ৪০টি ঝুড়ি তৈরি হতো এবং প্রতিটি ঝুড়ি ১৫টাকা দরে বিক্রি হতো। এখন বাঁশের দাম ২০০টাকা হলেও প্রতি ঝুড়ির দাম কমে ১২টাকা হয়েছে। তাতে ঝুড়ি বানিয়ে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তাই এখন ঝুড়ি বোনার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আয়ের জন্য বর্তমানে কেরলে কাজে গিয়েছেন গ্রামের হাসেন শেখ, বুদু সেখ, মহসেন সেখ। তাঁরা বলেন, গ্রামে একশো দিনের কাজ নেই আবার দিনমজুরের কাজ প্রতিদিন হয় না। এছাড়াও এখানে প্রতিদিনের রোজগার সর্বাধিক ২০০টাকা। অথচ একই পরিশ্রম করে কেরলে প্রায় ৭০০টাকা রোজগার করা যায়। তাই বাড়তি রোজগারের আশায় নিরুপায় হয়ে আমাদের বাড়ি ছেড়ে বহুদূর দেশে চলে আসতে হয়েছে। গ্রামের এক বৃদ্ধা জানান, প্রায় ৪০বছর আগে থেকে এই গ্রামে বাঁশের ঝুড়ি বোনাই প্রধান পেশা ছিল। এই গ্রাম থেকে আশেপাশের চারটি পান ব্যবসায়ী সমিতিকে প্রতিদিন কয়েক হাজার ঝুড়ি সরবরাহ করত। এলাকায় পানের উৎপাদন ও ব্যবসা কমে যাওয়ায় ঘড়ির চাহিদা কমে যায়। বাধ্য হয়ে এলাকার মানুষকে ভিনরাজ্যে ছুটতে হয়েছে। ( ফাইল চিত্র )
  • Link to this news (বর্তমান)