• ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’র রচয়িতা কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর তিরোভাব তিথিতে উৎসব ঝামটপুরে
    বর্তমান | ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’ গ্রন্থের রচয়িতা কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর তিরোভাব তিথি উপলক্ষ্যে উৎসবে মেতেছেন কেতুগ্রামের ঝামটপুরের বাসিন্দারা। সেই উৎসবের মধ্যেই কৃষ্ণদাস কবিরাজের লেখা পুঁথিগুলি সংরক্ষণের দাবি উঠল। শারদ শুক্লা দ্বাদশী তিথি থেকেই কৃষ্ণদাস কবিরাজের তিরোভাব দিবস উপলক্ষ্যে কেতুগ্রামের ঝামটপুর গ্রামে শুরু হয়েছে মহোৎসব। 

    কৃষ্ণদাস কবিরাজ ছিলেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের একনিষ্ঠ সহচর। পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের ঝামটপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি ঝামটপুর গ্রাম ছেড়ে মহাতীর্থ বৃন্দাবনে চলে যান। জনশ্রুতি  রয়েছে, কিশোর বয়সে প্রভু নিত্যানন্দের স্বপ্নাদেশে বৃন্দাবনে যান তিনি। বিরাশি বছর বয়সে বাংলা ভাষায় চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থ রচনা শুরু করেন। বছর দশেকের চেষ্টায় তা শেষ করেন। বৃন্দাবন থেকে কৃষ্ণদাসের পুজো করা গোপাল, তাঁর ব্যবহৃত একটি খড়ম ও চরিতামৃতের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করে আনেন শিষ্য মুকুন্দ দাস। কৃষ্ণদাস কবিরাজ ১৫৮৫ সালের পর বৃন্দাবনে বসেই সেখানকার বৈষ্ণব গোস্বামীদের অনুরোধে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষার মিশ্রণে প্রায় ২৪ হাজার চরণ বিশিষ্ট ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’ গ্রন্থটি রচনা করেন। এটি বাংলা সাহিত্য তথা ভারতবর্ষের বৈষ্ণব সংস্কৃতির মহাগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। 

    এদিকে কৃষ্ণদাস কবিরাজের তিরোভাব দিবস উপলক্ষ্যে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া সহ বেশ কিছু জেলা থেকে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মানুষের সমাগম হয়েছে ঝামটপুরে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন এলাকার কীর্তন গায়করাও এই কয়েকদিন ধরেই ঝামটপুর গ্রামে এসে ভিড় করেন। অনেক বৈষ্ণব সাধকরা আবার কৃষ্ণদাস কবিরাজের বাড়ির মাটি পর্যন্ত নিয়ে যান। সেবায়েত পরিবার  জানান, বাবা ত্রিভঙ্গদাস মহন্তের মৃত্যুর পর কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর খড়ম, পাণ্ডুলিপি ও গোপালের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তবে আমরা চাই, পাণ্ডুলিপিগুলি যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষণ করা হোক। পাশাপাশি প্রশাসন যদি জন্মভিটা সংরক্ষণ করে তাহলে খুব ভালো হয়। কিন্তু প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাছাড়া বৃন্দাবন থেকে কৃষ্ণদাস কবিরাজের হাতে লেখা শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি, খড়ম সহ অন্যান্য ব্যবহৃত সামগ্রী এনে কেতুগ্রামের তাঁর বাড়িতে রাখা হয়েছে। সেগুলি সংরক্ষণেরও কোনও উদ্যেগ প্রশাসন নেয়নি।

    এদিকে কৃষ্ণদাস কবিরাজের তিরোভাব দিবস উপলক্ষ্যে কেতুগ্রামের ঝামটপুর গ্রামে মেলা বসেছে। ভিন জেলা থেকেও বহু ভক্ত এসেছেন। বীরভূমের বাসিন্দা তুফান দাস বৈরাগ্য, নীলোৎপল মোদক বলেন, কৃষ্ণদাস কবিরাজ মহাশয় আমাদের কাছে এক আবেগের বিষয়। তিরোভাব তিথিতে তাঁর জন্মভিটেতে না এলে মনে হয় সব অপূর্ণ থেকে যাবে। প্রতিবছর আমরা উৎসবের দিনগুলিতে ঝামটপুরে এসে থাকি। পালাকীর্তন শুনি। আমাদের কাছে ঝামটপুর এক তীর্থক্ষেত্র। নামী মানুষরাও এদিন ভিড় জমান ঝামটপুরে। উৎসব ঘিরে পুলিসি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

    (কৃষ্ণদাস কবিরাজের লেখা পাণ্ডুলিপি।-নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)