• শীর্ষ আদালতের কড়া মন্তব্যের পরই ‘সিভিক-শুমারি’র উদ্যোগ
    বর্তমান | ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কড়া মন্তব্যের পরই নড়েচড়ে বসেছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। কোন জেলায় ঠিক কতজন সিভিক রয়েছেন, তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া কীভাবে চলেছে, বয়স ও উচ্চতার ক্ষেত্রে কী নিয়ম মানা হয়েছে, অর্থাৎ ‘সিভিক-শুমারি’ সংক্রান্ত সংক্রান্ত যাবতীয় নথি তৈরির কাজ রাজ্য পুলিসে শুরু হয়েছে। বিভিন্ন জেলার রিপোর্ট পুলিস ডিরেক্টরেটে জমা পড়ার পর সমস্ত নথি  পর্যালোচনা করে দেখা হবে। সেখানে কোনও ফাঁক  থাকলে, তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।

    মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সিভিক নিয়োগের শুরু হয়। রাজ্য পুলিসে সিভিকের সংখ্যা এক লক্ষ ৪০ হাজারের কাছাকাছি। খাতায়কলমে সহযোগী বলা হলেও, জেলা পুলিসের থানা-ফাঁড়ির কাজ চালানোর ক্ষেত্রে তাঁরাই বড় ভরসা। পুলিস কর্মীর সংখ্যা কম থাকায় অপরাধের ঘটনাস্থল পাহারা দেওয়া বা তদন্তের কাজে তাঁদের কাজে লাগাতে বাধ্য হচ্ছেন জেলার সিনিয়র অফিসাররা। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ডিউটিতে লাঠি হাতে তাঁদের নামানো হচ্ছে অভিযোগ এসেছে বিভিন্নমহল থেকে। এই নিয়ে বারবার বিতর্ক হয়েছে। সার্ভিস বুক না থাকায় শাস্তির ব্যবস্থাও নেই তাঁদের।

    রাজ্য পুলিস সূত্রে খবর, সিভিক নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও পদ্ধতি নেই। বিভিন্ন জেলার পুলিস সুপাররাই জেলাস্তরে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাঁদের নিয়োগ করে থাকেন। মাধ্যমিক পাস যে কোনও ছেলেমেয়ে সিভিকের চাকরিতে আবেদনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হন।  নিয়োগের সময় নামমাত্র ইন্টারভিউ নেওয়া হয় সিভিকের প্রার্থীদের। তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স সীমা বা উচ্চতা বেঁধে দেওয়া হয়নি। যে কারণে পঁয়ত্রিশ উর্ধ্ব অনেকে তো বটেই, এমনকী খর্বকায় হয়েও অনায়াসে সিভিকে চাকরি করছেন। রাজ্য পুলিসের সূত্র বলছে, বিভিন্ন জেলার এক একটি থানায় চারশো থেকে পাঁচশো জন সিভিক রয়েছেন। দক্ষিণ বঙ্গের এমনকিছু থানা রয়েছে যেখানে সিভিকের সংখ্যা তার চাইতেও বেশি। কমপক্ষে তিনশো সিভিক মিলবে রাজ্য পুলিসের যে কোনও থানায় গেলেই।  অভিযোগ তাঁদের অনেকেই ডিউটি করেন না। অথচ মাসের পর মাস তাঁরা বেতন পেয়ে যান। অভিযোগ, সিভিকদের একটা বড় অংশ রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রতিটি জেলা থেকে কোটি কোটি টাকা বিল আসছে রাজ্যের অর্থ দপ্তরে। যা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা প্রশাসনের।  

    সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরই সিভিক ভলেন্টিয়ারদের স্ট্রিমলাইন করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য পুলিস। প্রতিটি জেলায় ঠিক কতজন সিভিক রয়েছেন, তাঁদের কোথায় কবে ইন্টারভিউ হয়েছে, কারা ইন্টারভিউ নিয়েছেন, কতক্ষণ ধরে একজনের ইন্টারভিউ চলেছে, কী কী নথি জমা নেওয়া হয়েছিল সহ সমস্ত তথ্য ঝাড়াইবাছাই করার জন্য নির্দেশ দেওয়া গিয়েছে প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে। সেই সঙ্গে তাঁদের বেতন দিতে কত টাকা খরচ হয়েছে এবং কোথা থেকে টাকার সংস্থান করেছে প্রশাসন তার রিপোর্ট তৈরি করছে নবান্ন। যাতে শীর্ষ আদালতের কাছে রাজ্যকে বিপাকে পড়তে না হয়।।    
  • Link to this news (বর্তমান)