• ধর্ষণ করা হয় জয়নগরের কিশোরীকে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট
    বর্তমান | ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা: জয়নগরের স্কুল পড়ুয়া নাবালিকাকে ধর্ষণই করা হয়েছে। তারপর তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে একথা স্পষ্ট জানিয়েছেন এইমসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দল।  তবে কিশোরী যে গণধর্ষণের শিকার হয়নি, তাও উঠে এসেছে এই রিপোর্টে। এই রিপোর্ট ইতিমধ্যেই বারুইপুর জেলা পুলিসের হাতে পৌঁছেছে বলে খবর। নাবালিকার শরীরের একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে  উল্লেখ  রয়েছে রিপোর্টে।

    জয়নগরের ওই নাবালিকা চলতি মাসের ৪ তারিখ মহিষমারি হাট থেকে টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরছিল বিকেল পাঁচটা নাগাদ।  মহিষমারি থেকে তার পিছু নেয় অভিযুক্ত মোস্তাকিন সর্দার। রাস্তা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় তার বাবা-মা স্থানীয় ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে গেলে তাদের বিভিন্ন অজুহাতে ঘোরানো হতে থাকে। পরেরদিন ভোরে নাবালিকাকে স্থানীয় একটি জলাজমিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। পরিবারের দাবি ছিল, কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই নিয়ে উত্তাল হয় জয়নগর। বাবা-মা দাবি করেন রাজ্য সরকারের কোনও হাসপাতালে তাদের মেয়ের ময়নাতদন্ত করতে দেবেন না। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে দেহ আনা হয় কাটাপুকুর মর্গে।  মামলা গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। উচ্চ আদালতের নির্দেশ আসে, ময়নাতদন্ত করবেন কল্যাণী এইমসের চিকিৎসকরা। সেখানে পরিকাঠামো না থাকলে জেএনএম হাসপাতালে পরিকাঠামো ব্যবহার করে ময়নাতদন্ত করবেন তাঁরা।  ৭ তারিখ এইমসের ১১ জনের বিশেষজ্ঞ দল ময়নাতদন্ত করেন। তিনঘণ্টা ধরে দেহের কাটাছেঁড়া চলে। সেই রিপোর্ট সম্প্রতি এইমসের চিকিৎসকের তরফে জেলা পুলিসকে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।

    ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কিশোরীকে বলপূর্বক ধর্ষণ করা হয়। তার যোনিপথে ‘সোয়াব’ মিলেছে। যার থেকে স্পষ্ট, মোস্তাকিন তাকে ধর্ষণ করেছে। ‘হাইমেন’ (সতীচ্ছেদ পর্দা) ক্ষতবিক্ষত ছিল। তার যৌনাঙ্গে বারবার আঘাত করা হয়েছে। রিপোর্টে যা তার মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, শ্বাসরোধ করা হয়েছে এবং নাক মুখ চেপে ধরায় দমবন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। কিশোরীর মুখ নাক থেকে রক্ত বেরিয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা। এছাড়া তার ঘাড় ও শরীরের পিছনে আঘাত রয়েছে। তার পাকস্থলিতে আংশিক হজম হওয়া ১৮৯ গ্রাম খাবারের অবশিষ্টাংশ মিলেছে। দেহের আরও অন্য জায়গাতে আঘাতের কথা বলা হয়েছে। সবটাই করা হয়েছে কিশোরী জীবিত থাকাকালীন। ময়নাতদন্তের এই রিপোর্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে, আগে কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। তারপর তাকে খুন করেছে দুষ্কৃতী। অভিযুক্ত মোস্তাকিন পুলিসকে জানিয়েছে চিনে ফেলাতেই সে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পর খুন করে। অভিযুক্তকে  জিজ্ঞাসাবাদ করে  পুলিস জেনেছে, কিশোরীরে অপহরণের পর নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে এই পাশবিক ঘটনা ঘটায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ থাকার কথা শুনে নির্যাতিতার বাবা বলেন, তাঁরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। কিন্তু পুলিস প্রথম থেকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ফাঁড়ি প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব দিলে এতবড় ঘটনা ঘটত না। বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন নাবালিকার বাবা।
  • Link to this news (বর্তমান)