প্রশ্নচিহ্নের সামনে ওয়েষ্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের ভূমিকা। কারণ, আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের ঘটনায় বিচার চেয়ে মাঠে নামার পরে চিকিৎসকদের এই সংগঠন একটি ট্রাস্ট গঠন করেছে। আর সেই ট্রাস্টের নাম রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ছাত্র হস্টেলের ঠিকানায়। প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।জুনিয়র ডাক্তারদের সেই আবেদন যাচাই না-করেই কী ভাবে রাজ্যের রেজিস্ট্রেশন অফিস সরকারি হাসপাতালের ঠিকানায় ট্রাস্ট গড়ার অনুমতি দিল, তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। ওই ট্রাস্টের নামে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টও খোলা হয়েছে। সেই ব্যাঙ্কের খাতাতেও ট্রাস্টের ঠিকানা হিসেবে জ্বলজ্বল করছে সরকারি হাসপাতালের হস্টেল।
এ ছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনের সমর্থনে সেই অ্যাকাউন্টে দেশ-বিদেশ থেকে যে আর্থিক সহায়তা আসছে, তার বিনিময়ে রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে কানাঘুষো শুরু হয়েছে। জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের ওই অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়ে রসিদ না-পেয়ে এক ব্যক্তি সংগঠনটির যাবতীয় কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে বিধাননগর সিটি পুলিশের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন। ওই ট্রাস্টের সম্পাদক, চিকিৎসক রাজদীপ সাউকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, 'আমাদের আইনজীবীরা সবটা জানেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই যা করার করা হয়েছে। ফলে যদি কোনও সমস্যা হয়, তাঁরা বিষয়টি দেখবেন।'
ওয়েষ্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, ১৩ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার অফ কলকাতা বা আরএ কলকাতা অফিস থেকে ১৮৮২ সালের ইন্ডিয়ান ট্রাস্ট আইন মেনেই তাঁদের সংগঠনের নামে রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে। যেখানে ট্রাস্টের ঠিকানা - রুম নম্বর-৩২, কেবি হস্টেল, অ্যাট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ১ ক্ষুদিরাম বোস সরণি, বিধান সরণি, শ্যামবাজার, কলকাতা-৭০০০০৪ হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যাঙ্কের কলকাতা হাইকোর্ট শাখায় খোলা অ্যাকাউন্টেও ওই ঠিকানাই দেওয়া হয়েছে।
বিধাননগর পুলিশের কাছে এক ব্যক্তি অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন, তিনি ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অনলাইনে পাঁচ হাজার টাকা পাঠালেও তাঁকে কোনও রসিদ দেওয়া হয়নি। 'পাবলিক মানি'-র অপব্যবহারের আশঙ্কায় তিনি বিষয়টির তদন্ত চেয়েছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের এই ট্রাস্ট ঘিরে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীদের একাংশও।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তৌসিফ আহমেদ বলেন, 'যে কোনও ব্যক্তির থেকে টাকা নেওয়া যেতেই পারে, কিন্তু তাঁকে রসিদ না দিলে, তা কালো টাকা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। একটা সরকারি হাসপাতালের ঠিকানায় রাজ্যের অর্থ দপ্তরের অধীনস্থ রেজিস্ট্রার অফিস ওই ট্রাস্টের নাম নথিভুক্ত করায়, ওই দপ্তরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। কারণ আইনত আবেদনের পরে ঠিকানা যাচাই করে তারপরে সেই ঠিকানাকে মান্যতা দেওয়ার কথা।'
আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ, স্বচ্ছতা এবং যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মানার ডাক দিয়ে ডাক্তাররা এই আন্দোলনে নেমেছেন, সেখানে তাঁদের এই ট্রাস্ট তৈরির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। তাঁদের অনেকগুলি দাবির মধ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছাত্র-ভোট করানোর দাবি রয়েছে। অথচ যে ট্রাস্ট তৈরি হয়েছে, যেখানে কোনও নির্বাচনের উল্লেখ নেই। ট্রাস্টের মাথায় থাকা তিনজনই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।
প্রায় সাত হাজার জুনিয়র চিকিৎসকের সংগঠন হিসেবে এই ট্রাস্ট তৈরি হয়েছে - এমন দাবি করা হলেও আইনত তার কোনও বৈধতা নেই। আইনজীবীদের একাংশের আরও দাবি, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বার বার জুনিয়র ডাক্তাররা জেনারেল বডি বা জিবি মিটিং করলেও আইনত তারও কোনও বৈধতা নেই।
আইনজীবীদের একাংশের আরও প্রশ্ন, কিছু স্বঘোষিত ডাক্তারের দাবি মেনে কোনও রেজিস্ট্রার্ড সংগঠন ছাড়া কী করে তাঁদের সঙ্গে রাজ্য সরকার ১৬ সেপ্টেম্বর মউ চুক্তি স্বাক্ষর করল? সে ক্ষেত্রে এমন অবৈধ একটি বিষয়কে বৈধতা দেওয়ার দায় আমলাদের ঘাড়েই পড়তে পারে বলে ধারণা আইনজীবীদের।