• বিজয়ায় 'বোধন' জনসংযোগের, নির্দেশ শীর্ষ নেতৃত্বের
    এই সময় | ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়: দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই রাজ্যে উপনির্বাচনের বাজনা বেজে উঠেছে। যে ছ'টি জায়গায় ভোট, সেই প্রতিটি কেন্দ্রে জয় নিয়ে প্রত্যয়ী তৃণমূল নেতৃত্ব। নির্বাচনের প্রচার শুরুর আগেই রাজ্যজুড়ে বিজয়া সম্মিলনীর মাধ্যমে নিবিড় জনসংযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে জোড়াফুল শিবির।দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন বিধানসভা তো বটেই, এমনকী ব্লকে স্তরেও জনসংযোগে নামছেন তৃণমূলের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ছাড়াও প্রথম সারির নেতারা। আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই এই কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।

    রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা বেহালা পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে আজ পরপর দুটি বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত থাকবেন। সেখানে এই কর্মসূচি পালনের দায়িত্ব বেহালার দুই কাউন্সিলারকে দেওয়া হয়েছে। শশী বলেন, 'আমরা সারা বছর জনসংযোগ করি। দলীয় উদ্যোগে বিজয়া সম্মিলনীতে মানুষের কথা শুনি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে নিরন্তর উন্নয়নের কাজ চলছে তা সকলের সামনে তুলে ধরি।'

    তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর প্রথম দিনে ব্যারাকপুর বিধানসভা কেন্দ্রে হাজির থাকবেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। দলীয় সূত্রের খবর, আগামী কয়েক দিন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মলয় ঘটক, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, মানস ভুঁইয়া সহ দলের প্রথম সারির অধিকাংশ মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়করা এই জনসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের মতো শাখা সংগঠন এবং নবীন প্রজন্মের নেতৃত্বকেও জনসংযোগে পাঠানো হচ্ছে।

    রাজ্যজুড়ে এই কর্মসূচিতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে সমস্ত বিরূপ প্রচারের জবাব দেবেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

    আগামী ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ছ'টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে বিরোধী শিবির নানা ঢঙে আন্দোলন করছে। তাই উপনির্বাচনে সবক'টি কেন্দ্রে জয়ী হয়ে সাধারণ মানুষ যে মমতার পাশেই রয়েছে, সেই বার্তা দিতে চাইছে তৃণমূল। দলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বুধবার ফেসবুকে লিখেছেন, 'ভোটের কার্নিভালে আসুন। মুখে তো অনেক হলো, এবার জনতার দরবারে বিচার হোক।'

    যে বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে উপনির্বাচন রয়েছে সেখানে বিজয়া সম্মিলনীর পাশাপাশি বুধবার থেকেই নির্বাচনী প্রচারেও নেমে পড়ছে জোড়াফুল শিবির।

    সূত্রের খবর, কালীপুজো পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে এই জনসংযোগ কর্মসূচি চলবে। পাশাপাশি যে এলাকাগুলিতে বন্যা হয়েছিল সেখানেও ত্রাণ কার্য চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।

    অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত থেকেছেন। এবারেও সেখানে মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেন তিনি। তৃণমূলের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, 'বিজয়ী সম্মিলনীর পাশাপাশি বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে ত্রাণকার্য চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে সংগঠনকে সর্বত্র জনসংযোগে শামিল হওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।'

    ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী নির্দিষ্ট একটি সূচি মেনে শুরু হয়। কোন মন্ত্রী, কোন সাংসদ-বিধায়ক, শাখা সংগঠনের কোন নেতা কোথায় বিজয়া সম্মিলনী করতে যাবেন তা কেন্দ্রীয় ভাবে ঠিক করে দেওয়ার রেওয়াজও চালু হয়।

    জনসংযোগের এই কর্মসূচিতে গিয়ে তৃণমূলের মন্ত্রী, সাংসদ-বিধায়করা কী কী করবেন, ভাষণে কোন বিষয়ে তাঁদের গুরুত্ব দিতে হবে অতীতে তা নিয়েও রাজ্যস্তর থেকে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট একটি সাংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে গত কয়েকবছর ধরে এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হতে শুরু করেছে। এ বছরও একই মডেলে বিজয়া সম্মিলনীর মাধ্যমে তৃণমূলের জনসংযোগ কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে।

    জানা গিয়েছে, এখনও অবধি ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সূচি তৈরি করা হয়েছে। আজ, প্রথম দিনের সূচিতে পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ কলকাতায় যে বিজয়া সম্মিলনী হতে চলেছে তার মূল বক্তা কেন্দ্রীয় ভাবে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ব্যতিক্রম বীরভূম জেলা। সেখানকার মুরারই ও নলহাটিতে যে বিজয়া সম্মিলনী হবে তার সূচিতে বক্তার নামের জায়গায় 'স্থানীয় নেতৃত্ব' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের একাংশ মনে করছেন, অনুব্রত মণ্ডল বীরভূমে ফিরে আসায় তিনি হয়তো মূল বক্তাদের নাম ঠিক করতে পারেন।
  • Link to this news (এই সময়)