এই সময়: রেড রোড পুজো কার্নিভালের মেডিক্যাল ইউনিটের কাজে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা ব্যাজ পরে যাওয়ায় মঙ্গলবার পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার চিকিৎসক তপোব্রত রায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেও তা নিয়ে বিতর্কের এখনই ইতি পড়ছে না।এই ঘটনায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে, ভাল করে খোঁজখবর না নিয়ে কেন ওই চিকিৎসককে ভিআইপি ডিউটিতে পাঠানো হয়েছিল। বিনা আমন্ত্রণে কী ভাবে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চের ঠিক উল্টো দিকে ভিআইপি বক্সে বসার সুযোগ পেলেন, তা নিয়েও রীতিমতো ধন্দ তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ আবার আশঙ্কা করছেন, মেয়রকে বিপাকে ফেলতেই পরিকল্পনা মাফিক এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। পুলিশ যথাসময়ে নজর না-দিলে দেশ-বিদেশের অতিথিদের সামনে রাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারত।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের অবশ্য দাবি, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা ব্যাজ পরে তিনি কোনও অন্যায় করেননি। আগামী দিনেও তিনি এই ব্যাজ পরে ডিউটি করবেন। ঘটনার প্রতিবাদে পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা সরব হয়েছেন পুর চিকিৎসকদের একাংশ। নিজেদের ক্ষোভের কথা জানাতে এ দিন পুরসভার স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিবাদী চিকিৎসকরা। সেখানে তাঁরা তিনটি দাবি পেশ করেছেন।
তার মধ্যে রয়েছে পুরসভার একজন চিকিৎসককে অন্যায় ভাবে আটক করার জন্য কলকাতা পুলিশকে ক্ষমা চাইতে হবে। পুরসভার তরফ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার নিন্দা করে পোস্ট দিতে হবে এবং তপোব্রতকে পুরসভার পক্ষ থেকে আইনি সাহায্য দিতে হবে। এর জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে এ বার থেকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ব্যাজ পরে তাঁরা ডিউটি করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, পুলিশের হাত থেকে আপাতত রেহাই মিললেও ওই চিকিৎসকের আচার-আচরণ নিয়ে অসন্তুষ্ট পুর কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, তপোব্রতকে কয়েক বছর আগে ন্যাশনাল হেলথ আরবান মিশন প্রকল্পে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। রেড রোড কার্নিভালের জন্য তাঁকে আপৎকালীন ডিউটিতে পাঠানো হয়েছিল। শহরে কোনও বড় সরকারি অনুষ্ঠান থাকলে কলকাতা পুরসভা থেকে চিকিৎসক দল এবং অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয় — এটাই রীতি। পুর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সে দিন দুপুর দুটোতে তপোব্রত রেড রোডে পৌঁছে যান।
প্রথম থেকেই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা ব্যাজ পরে তিনি ভিআইপি দর্শকাসনে বসেছিলেন। তাঁর পরণে ছিলো কালো রংয়ের টি-শার্ট। তাতে লেখা ছিল ‘শিরদাঁড়া বিক্রি হয় না’। তা দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই তাঁকে আটক করে ময়দান থানায় তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তারপরই থানার বাইরে শুরু হয় বিক্ষোভ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, পুলিশের হাত থেকে আপাতত রেহাই মিললেও ভবিষ্যতে তাঁকে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, পুলিশের রিপোর্ট হাতে এলেই ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।
কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বুধবার বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, উনি দায়িত্বের সঙ্গে নিজের কাজটা করেন। কিন্তু কর্তব্যরত অবস্থায় একজন সরকারি আধিকারিক কখনই এই ধরনের কাজ করতে পারেন না। অফিস টাইমের বাইরে হলেও না হয় মানা যেত। কিন্তু উনি ভিআইপি ডিউটিতে ছিলেন। তা ছাড়া, পুজো কার্নিভালে কোনও ধরনের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না বলে কলকাতা হাইকোর্ট আগেই রায় দিয়েছে। তাই আমার মনে হয়, এই কাজটা সঠিক হয়নি।’
অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পুরসভার তরফে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে ডেপুটি মেয়র বলেন, ‘এখন ছুটি চলছে। অফিস খুললে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।’