• লক্ষ্মীপুজোর সময় গজলক্ষ্মীর আরাধনা হয় বাঁকুড়ায়, কেন এমন নিয়ম পালন করা হয়?
    হিন্দুস্তান টাইমস | ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • এবার লক্ষ্মীপুজো পড়েছে প্রায় দু’‌দিন ধরে। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার দু’‌দিনই পূর্ণিমা আছে। তাতে রাজ্যজুড়ে ধনলক্ষ্মীর আরাধনা করা হচ্ছে। কিন্তু জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম রামকানালীতে একটু অন্যরকম ছবি দেখা গিয়েছে। সেটি হল—এখানে গজলক্ষ্মীর আরাধনা হচ্ছে। বহু বছর ধরে এখানে এই পুজো হয়ে থাকে। এই গ্রামে হামেসায় ঢুকে পড়ে হাতির দল। আর ক্ষতি করে দেয় এলাকার ফসলের। সেই হাতির হাত থেকে ঘরের লক্ষী অর্থাৎ মাঠের ফসল বাঁচাতে গ্রামে শুরু হয়েছিল গজলক্ষীর আরাধনা। প্রায় শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো আজও একই ধারায় বয়ে চলেছে। প্রাচীন রীতি রেওয়াজ এবং বিশ্বাসের উপর ভর করেই বাঁকুড়ার রামকানালী গ্রামে গজলক্ষীর আরাধনায় মেতে ওঠেন গ্রামের মানুষজন।

    লক্ষ্মীপুজোর দিন বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় ব্লকের রামকানালি গ্রামে গজলক্ষ্মীর পুজো হয়ে থাকে। এটা অনেকেরই অজানা। তবে যেসব পর্যটক দুর্গাপুজোর পর বাঁকুড়ায় ঘুরতে যান তাঁরা এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। কিন্তু তারপরও অনেকের কাছেই গজলক্ষ্মীর পুজো অজানা। বিশেষ করে শহরে থাকা মানুষজনের। এখানে মহাধুমধাম করে পুজিতা হন দেবী লক্ষ্মী। তবে প্রতিমার দিক থেকেই হোক বা আচার অনুষ্ঠান, আর পাঁচটা লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে মিল নেই। রামকানালি গ্রামের মাহিষ্য পরিবারের লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে অন্যান্য লক্ষ্মীপুজোর মিল পাওয়া যাবে না। এখানে লক্ষীর প্রতিমার অবস্থান হাতির পিঠে। আর এলাকায় মানুষ তাই নামকরণ করেছেন গজলক্ষী। প্রায় ১২৬ বছরের প্রাচীন এই গজলক্ষ্মী পুজো।

    বহু কষ্টে গ্রামে চাষবাস করতেন কৃষকরা। আর সেই ফসল হাতির দল এসে নষ্ট করে দিয়ে যেত। ফলে একদিকে ফসলের ক্ষতি অপরদিকে খাদ্যাভাব দেখা দিত। তখন এক সন্ন্যাসী ফসল বাঁচানোর জন্য গজলক্ষ্মীর পুজো করার নিদান দেন। আর তখন থেকেই তা হয়ে আসছে। এমন তথ্যই এই গ্রামে কথিত আছে। গ্রামের বাসিন্দা কাজল দাস বলেন, ‘‌পূর্বপুরুষদের হাতে গড়া এই গজলক্ষ্মীর পুজো আজও সমানভাবে পালন করে চলেছেন মাহিষ্য পরিবারের মানুষজন। হাতির হাত থেকে ফসল বাঁচাতে হাতির পুজো করা হয় লক্ষীদেবীর সঙ্গে। রামকানালী গ্রামের ৪০টি মাহিষ্য পরিবারের প্রধান পুজো এই গজলক্ষী। এটা কৃষি প্রধান গ্রাম। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে কৃষিজমি আছে। তার জন্যই এমন পুজো।’‌

    দুর্গাপুজোর এবং লক্ষ্মীপুজোর আগে এই বিশেষ সময়ে জঙ্গল থেকে হাতি বেরিয়ে এসে ফসল খেয়ে নেয়। আবার কৃষিজমির উপর দাপিয়ে বেড়ায়। ফলে ফসল নষ্টও হয়। এই প্রবণতা দেখা যায় দীপাবলির আগে পর্যন্ত। তবে গজলক্ষ্মীর আরাধনার পর থেকে এমন উৎপাত অনেকটা কমে গিয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত দাসের বক্তব্য, ‘‌হামেসাই হাতি হামলা চালায় গ্রামের কৃষি জমিতে। সেই গজরাজদের হাত থেকে মাঠের ফসল বাঁচিয়ে লক্ষ্মীলাভের আশায় লক্ষ্মীপুজোর পাশাপাশি গজরাজের আরাধনা করেন গ্রামের মানুষজন। গ্রামে রয়েছে মন্দির। আজও সেখানে পুজিত হন দেবী গজলক্ষী। এলাকার মানুষের বিশ্বাস গজলক্ষীর আরাধনার মধ্যে গজরাজ সন্তুষ্ট হবে। ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন। মাঠের লক্ষী বাড়িতে তুলে আনবেন।’‌
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)