• বাংলাতেও বিষ্ণোই গ্যাং, মূল মাথা লরেন্সের ভাই
    এই সময় | ১৮ অক্টোবর ২০২৪
  • চিত্রদীপ চক্রবর্তী

    লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং অ্যাকটিভ ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল! প্রায় এক বছর আগে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) ডসিয়ারেই উল্লেখ করা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১১টি রাজ্যে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে। শুধু তা-ই নয়, সেখানে এটাও লেখা হয়, বিদেশের মধ্যে পর্তুগাল ছাড়াও এ দেশের দিল্লি(এনসিআর), মহারাষ্ট্র এবং বাংলায় বিষ্ণোই গ্যাংয়ের জাল ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন এক ব্যক্তি, যাঁর নাম আনমোল বিষ্ণোই। সম্পর্কে তিনি লরেন্সের আপন ভাই।সম্প্রতি মুম্বইয়ে বাবা সিদ্দিকীকে খুনের ঘটনার পরে কী ভাবে লরেন্সদের কাজকর্ম চলছে, সে সম্পর্কে এতদিন পরে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে এনআইএ। তাতেও উঠে এসেছে বেশ কিছু নতুন তথ্য। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদেরও।

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, দেশের কোথায় কোথায় লরেন্স গ্যাংয়ের কোন সদস্য লুকিয়ে রয়েছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এমনকী, এই গ্যাংয়ের কারা কোন জেলে বন্দি, সেই তালিকাও তৈরি করতে বলা হয়েছে। কারণ, বাবা সিদ্দিকীকে খুনের ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছে, গ্যাংয়ের ৭০০ জন সদস্যকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে তাদের সক্রিয় করার কাজ শুরু করেছেন লরেন্সের অন্য দুই সহযোগী গোল্ডি বারার এবং রোহিত গোদারা। এঁদের মধ্যে রোহিত মূলত অস্ত্র সরবরাহের কাজ করেন। আর গোল্ডির কাজ অনেকটা ডি কোম্পানির ‘সিইও’ ছোটা শাকিলের মতো। তিনি বিদেশে বসে শার্প শুটারদের ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে নির্দেশ পাঠান, কার থেকে টাকা আদায় করতে হবে, কাকেই বা খতম করতে হবে।

    তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ডি কোম্পানির স্টাইলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজের ‘এল কোম্পানি’ তৈরি করে ফেলেছেন লরেন্স। বিদেশের মোট ৬টি দেশ এবং ভারতের ১১টি রাজ্যে এই কোম্পানির লোকেদের মাইনে এবং টিপস দিয়ে পোষেন তিনি। মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে রিজ়ার্ভে রাখা হয়েছে ১০০ জন শার্প শুটারকে। প্রয়োজনে যাদের অন্য গ্যাংয়ের লোকেরা সুপারি কিলার হিসেবে ভাড়ায় নিতে পারে।

    এনআইএ-র নথিতে দাবি করা হয়েছে, চণ্ডীগড় কলেজে লরেন্সের সঙ্গে পড়াশোনা করা সতিন্দর সিং ওরফে গোল্ডি বারারকে ক্যানাডা, পাঞ্জাব এবং দিল্লির গ্যাং দেখাশোনা করার ভার দেওয়া হয়েছে। ভাই আনমোল দিল্লি, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের গ্যাং পরিচালনা করেন। আবার রোহিত গোদারাকে দেওয়া হয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং আমেরিকার গ্যাং দেখার কাজ। এদের মধ্যে পাঁচটি রাজ্য থেকে আনমোলের টার্গেট মাসে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা।

    তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘অপহরণ এবং হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় তো রয়েইছে, পাশাপাশি বিষ্ণোই গ্যাং জাল নোট, আর্মস স্মাগলিং-এর কারবারও চালায় এই রাজ্যগুলিতে। আগে তেমন গুরুত্ব না দিলেও সলমন খানকে হুমকি এবং বাবা সিদ্দিকীকে খুনের ঘটনার পরে লরেন্স গ্যাংকে আমরা আর হালকা ভাবে নিচ্ছি না।’

    কিন্তু এ রাজ্যে এই গ্যাংয়ের জাল কতটা ছড়িয়ে রয়েছে?

    গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের মুঙ্গের এবং খাগড়িয়া থেকে দেশি অস্ত্র সংগ্রহ করে এল কোম্পানির সদস্যরা। সেগুলো বাংলার বিভিন্ন ডেরায় এনে রাখা হয়। তারপর অর্ডার মাফিক পাঠানো হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। তবে যে বিষয়টি গোয়েন্দাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে তা হলো, এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে আনমোলের লোকেরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগই জমা পড়ে না। তবে এ বারে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের এ সব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে।
  • Link to this news (এই সময়)