• নবদ্বীপে বুধবার থেকে শুরু হল রাসের কাঠামো পুজো
    বর্তমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: তিথি মেনে বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পূর্ণিমা থাকায় এই দু’ দিনই ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মীর আরাধনার পাশাপাশি বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপের ঐতিহ্যপূর্ণ রাস উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। বুধবার পূর্ণিমা লাগার পর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত চিরাচরিত প্রথা মেনে নবদ্বীপের অধিকাংশ বারোয়ারি পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা প্রতিমার কাঠামো পুজো করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫-১৯ মিনিট পর্যন্ত পূর্ণিমা থাকায় এদিন সকাল থেকেও অনেক পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের তাদের প্রতিমার কাঠামো পুজো করতে দেখা যায়। ইতিমধ্যে বিজয়া দশমীর দিন নবদ্বীপের ঐতিহ্যপূর্ণ বেশকিছু বারোয়ারির কাঠামো পুজো হয়েছিল। তবে প্রতি বছরই কোজাগরী পূর্ণিমার দিন অধিকাংশ বারোয়ারির কাঠামো পুজো হয়ে থাকে, নবদ্বীপের এমনটাই রেওয়াজ। এবার বুধবার ও বৃহস্পতিবার দু’ দিন লক্ষ্মীপুজো হওয়ায় দু’ দিনের মধ্যে কোনও পুজো কমিটি বুধবার রাতে, কোনও বারোয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে কাঠামো পুজো করেন। কিন্তু রাসের কিছু শ্যামাপুজোর কাঠামো পুজো কালীপুজোর পরের দিন হয়। কাঠামো পুজোর আগে কাঠামোগুলি ফুলমালা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়, মোমবাতি, প্রদীপ জ্বালিয়ে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে রাসের সূচনা হয় কাঠামো পুজোয়। তবে এদিন কাঠামা পুজোয় কোনও বারোয়ারি ঢাকঢোল, কেউ ব্যাঞ্জো তাসার আয়োজনও করেছিল।


    আগামী ১৫ নভেম্বর শুক্রবার নবদ্বীপের ঐতিহ্যপূর্ণ শাক্ত ও বৈষ্ণবদের মিলন উৎসব রাস। মন্দির নগরী এই শহরে প্রায় সাড়ে তিনশোর বেশি শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব সহ বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা হয়। নবদ্বীপের রাস মূলত শাক্তরাস, যার বাড়বাড়ন্ত  মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঐকান্তিক ইচ্ছাতেই। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে যে উল্লেখযোগ্য পুজোগুলির কাঠামো পুজো হল তার মধ্যে ঐতিহ্যপূর্ণ যোগনাথতলার জোড়া বাঘ গৌরাঙ্গিনী মাতা, বড়ালঘাটের ভুবনেশ্বরী, হরিসভা পাড়ার ভদ্রকালী মাতা, রামসীতা পাড়ার বামাকালী, রণকালী, অমর ভারতী ক্লাবের গণেশ জননী, রাধাবাজার পার্কের ডুমুরেশ্বরী, রয়েল ক্লাব ও বিশ্বজয়ী ক্লাবের পার্থসারথি, পিরতলার গঙ্গামাতা, রয়্যাল সোসাইটির মহিষমর্দিনী মাতা, বুড়োশিবতলার কাত্যায়নী মাতা সহ বিভিন্ন দেবদেবীর। বৃহস্পতিবার কাঠামো পুজো হয় আগমেশ্বরী পাড়ার আমড়াতলার মহিষমর্দিনী মাতা, ঢপওয়ালির মোড়ের নটরাজ, রামগোবিন্দ রোডের ভারতমাতা সহ বিভিন্ন দেবদেবীর। 


    নবদ্বীপ কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটির কার্যকরী সভাপতি দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সরকারি হিসেবে প্রায় ২৪০টি পুজো হলেও বেসরকারি হিসেবে প্রায় সাড়ে তিনশোর বেশি বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো হয় এই শহরে। ১৯৯৪ সালে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিমা শোভাযাত্রা অর্থাৎ স্থানীয় ভাষায় আড়ং করার জন্য সার্কুলার রোডের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আর সেই সময়ে হাতেগোনা কয়েকটা বারোয়ারি ওই সার্কুলার রোডের আড়ংয়ে অংশগ্রহণ করেছিল। এখন অধিকাংশ প্রতিমাই ওই সার্কুলার রোড ধরে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এই রাস দেখতে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন। এই রাস উৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে করা যায় সেজন্য প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সব রকম চেষ্টা করবে কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটি । নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, প্রায় সাড়ে তিনশোর বেশি বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো হয়। ঐতিহ্যপূর্ণ এই উৎসব যাতে শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠুভাবে হয় পুরসভা সেদিকে নজর রাখবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)