• দুর্গাপুজোকে ঘিরে রোজগার বৃদ্ধি, জেলার লোকশিল্পের পুনর্জন্ম, উচ্ছ্বসিত শিল্পীমহল
    বর্তমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: দুর্গাপুজো ধর্মীয় সীমার ঊর্ধ্বে উঠে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ উৎসবের আনন্দে শামিল হচ্ছেন। ধর্মীয় ও সামাজিক এই মিলনমেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। বড় বড় পুজো কমিটি লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে পুজো করছে। মণ্ডপ তৈরিতে কারিগরদের সঙ্গে লোকশিল্পীদের চাহিদা বাড়ছে। দর্শনীয় মণ্ডপের সঙ্গে লোকশিল্প নতুন করে জায়গা করে নিচ্ছে। ঝাড়গ্ৰামের পুজোয় জঙ্গলমহলের লোকসংস্কৃতি এবার বেশি করে ফুটে উঠেছে। যা লোকশিল্পীদের মুখের হাসি চওড়া করেছে।


    বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। এই উৎসবের সঙ্গে অতীতেও মৃৎশিল্পী, ঢাকি, কুমোর, পটুয়াশিল্পী, মালাকার, ময়রা, তাঁতশিল্পী, পুরোহিতরা যুক্ত থাকতেন। শহর ও গ্ৰামের স্বল্প পরিসরের পুজোয়ও অর্থনীতি জড়িয়ে থাকত। বর্তমানে শারদোৎসব বৃহৎ শিল্পে পরিণত হয়েছে। বিপুল অর্থব্যয়ে থিমের পুজো হচ্ছে। মণ্ডপসজ্জায় কারিগর ও নানা পেশার শিল্পীদের দরকার হচ্ছে। সেইসঙ্গে রোজগারের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ঝাড়গ্ৰামে এবার দুশোর বেশি দুর্গাপুজো হয়েছে। জেলার থিমের পুজোয় লোকশিল্প অনেক বেশি জায়গা করে নিয়েছে। পুজোর উদ্বোধনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ঢাকি, ছৌ নৃত্যশিল্পী, ধামসা-মাদল বাদ্যকরদের ডাক পড়েছে। ঝাড়গ্ৰাম জেলা তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে পুজোর কার্নিভালে ৭০জন লোকশিল্পী অংশগ্ৰহণ করেছেন। ঝাড়গ্ৰাম শহরের মণ্ডপশিল্পী লালচাঁদ ত্রিপাঠী বলেন, বারোয়ারি পুজোয় আগে সাধারণ প্যান্ডেল করা হতো। পুজোর থিমে এখন লোকসংস্কৃতির প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। ঝাড়গ্ৰাম শহরের বড় একটি পুজোয় গ্ৰামবাংলার ছবি তুলে ধরার কাজ করেছি। সেই কাজ করতে গিয়ে গ্ৰামের মৃৎশিল্পী, শোলা শিল্পীসহ অনান্য স্থানীয় শিল্পীদের সহযোগিতা নিতে হয়েছে। পুজোর সময় তাঁরা কাজ পেয়েছেন। গ্ৰামীণ এলাকায় যে শিল্পগুলো এতদিন ধুঁকছিল সেগুলো আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। 


    থিমশিল্পী গৌরাঙ্গ কুইলা বলেন, পুজোর দু’মাস আগে থেকে আমাদের কাজ শুরু হয়ে যায়। থিমের পুজোয় লোকশিল্পীদের চাহিদা বাড়ছে। পুজোর থিম সহ অন্যান্য শিল্পকর্মে আমরা নতুন করে চটের ব্যবহার করছি। এখন সারা বছর ধরে মণ্ডপ প্রস্তুতির কাজ চলে। 


    এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বহু সাধারণ কারিগর ও লোকশিল্পী যুক্ত হচ্ছেন। এই উৎসব লোকশিল্পের পুনরুজ্জীবনের আশা জোগাচ্ছে। ঝাড়গ্ৰামের সত্যাডিহী গ্ৰামের ঢাকি সুভাষ মিদ্দা বলেন, পুজোর সময় আগে বড় শহরে দল বেঁধে ঢাক বাজতে যেতাম। এখন জেলাতেও বড় বড় পুজো হচ্ছে। সেখান থেকে ডাক আসছে। এখন মণ্ডপে ঢাক বাজানো ছাড়াও শোভাযাত্রা, অনুষ্ঠানে ঢাকা বাজাচ্ছি। প্রশাসন থেকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক আসছে। পুজোর কার্নিভালে ঢাক বাজানো শুনতে লোকে ভিড় করে। যা কয়েক বছর আগেও ভাবতে পারতাম না। 


    জেলার ছৌ-নৃত্যশিল্পী বাপি মাহাত বলেন, দুর্গাপুজোর কার্নিভালে উপস্থিত ছিলাম। পুজোর সময় সব জায়গা থেকে আমাদের ডাক আসছে। প্রশাসনের তরফেও ডাকা হচ্ছে। ফলে বাড়তি রোজগার হচ্ছে। 


    ঝাড়গ্ৰাম জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক সন্তু বিশ্বাস বলেন, এবার দুর্গাপুজোর কার্নিভালে ৭০জন লোকশিল্পী অংশগ্ৰহণ করেছিলেন। উৎসবের মূল অনুষ্ঠানে বাংলার পরম্পরা তুলে ধরাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল।  ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)