• রূপে চমক, পাতে স্বাদহীন, বঙ্গের রূপোলি শস্যকে টেক্কা দিতে ব্যর্থ গুজরাতি ইলিশ
    বর্তমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: রূপের কদর সব সময়ই থাকে। কিন্তু গুণেরও বিচার হয়। রূপ থাক঩লেই সেরা এমনটা ভাবার কারণ নেই। বিশেষ করে গুজরাতি ইলিশের সঙ্গে বাংলার রুপোলি ফসলের এই তুলনা টানাই যায় না। গুজরাতের ইলিশের রূপ রয়েছে। দৈহিক গঠনও ভালো। বাজারে কলার পাতার উপর তা থাকলে যে কারও নজর ঘুরে যায়। কিন্তু স্বাদ? ভোজন রসিকরা বলছেন, বাংলার রুপোলি ফসলের স্বাদে ভাগ হবে না। গরম তেলে কাটা মাছের পিস পড়লেই চারদিক সুগন্ধে ম ম করতে থাকে। শুধু এক পিস মাছ ভাজা দিয়ে থালার ভাত সাবাড় হয়ে যায়। এক্ষেত্রে গুজরাতি ইলিশ বহু পিছিয়ে। বড় সাইজের ইলিশ বাড়িতে নিয়ে গেলেও মন জুড়ানো সুগন্ধ মিলছে না। মুখে তুলে সেই স্বাদও পাওয়া যায় না। এই মাছ পাতে তোলার পর অনেকেই আফশোস করছেন। তাই হাজার চেষ্টা করলেও বাংলার বাজারে এখনও ‘দাদাগিরি’ দেখাতে পারেনি গুজরাতি ইলিশ। একবার এই মাছ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার তা থলিতে অনেকেই ভরতে চান না।


    বাংলার সঙ্গে গুজরাতি মাছের ফরাক বোঝা যাবে কীভাবে? মৎস্য আধিকারিক সুমনকুমার সাহু বলেন, একটু চোখ মেললেই ফারাক বোঝা যাবে। গুজরাতের ইলিশ বড় সাইজের হয়। পেট অনেকটা চওড়া। চোখগুলিও বড়। লেজ এবং মাথার গড়নেও পার্থক্য রয়েছে। বাংলার রুপোলি ফসলের চোখ তুলনামূলকভাবে ছোট। এই মাছ দেখতে অনেকটা পটলের মতো। মুখ এবং লেজের দিকটা সরু। গুজরাতের ইলিশ বড় হলেও স্বাদ পাওয়া যায় না। বিক্রেতাদের একাংশ গুজরাতের ইলিশকেই বাংলার রুপোলি ফসল বলে চালাতে চায়। কিন্তু ‘জহুরি’রা ঠিক চিনে নেন। ইলিশের মতোই দেখতে আরও কিছু মাছ পাওয়া পাওয়া যায়। যাঁরা নিয়মিত বাজারে যান তাঁরা ফারাক ঠিক বুঝতে পারেন। মৎস্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গুজরাতে ইলিশ পাওয়া গেলেও সেখানে ততটা কদর নেই। কিন্তু ইলিশের নাম শুনলেই বাঙালির জিভে জল আসে। সেই সুযোগই নিচ্ছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। বড় সাইজের গুজরাতি ইলিশ এনে তারা মোটা টাকায় বিক্রি করতে চাইছে। কিন্তু স্বাদ না ভালো হওয়ায় এই মাছের দাম তত বেশি হওয়া উচিত নয়। 


    বর্ধমানের স্টেশন বাজারে আসা ক্রেতা আনন্দ হালদার বলেন, সব সময় ইলিশ মাছ কেনার সাধ্য থাকে না। উৎসবের মরশুমে তা পাতে তুলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাজারে এসে আসল নকলের পার্থক্য করাই দায় হয়ে উঠছে। গুজরাত থেকে ইলিশ বাজারে আসে সেটাই জানতাম না। পরে শুনেছি। এখন মাছ কেনার সময় রূপ নয়, আকৃতি দেখে ইলিশ কিনি। বাংলার রুপোলি ফসলকে টেক্কা দেবে এমন সাধ্য কার আছে।
  • Link to this news (বর্তমান)