নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টি। আর তাতেই কার্যত বানভাসী শিল্পনগরী দুর্গাপুর। জলের তলায় শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ অংশ। বহু বাড়ির একতলায় জল ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মূল রাস্তাগুলিতে নদীর গতিতে জল বইতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই বৃহস্পতিবার বেশ কয়েক ঘণ্টা স্তব্ধ হয়ে যায় দুর্গাপুর শহর। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশি নালা দখল করে প্রাচীর তোলা, নালা বুজিয়ে রাস্তা করা বেপরোয়াভাবে প্লটিং করার জন্যই এই বিপর্যয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভোর থেকেই মাঠে নামে পুরসভা। খোলা হয় কন্ট্রোল রুম। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নিকাশি নালা সাফ করা হয়। বেশ কয়েকটি প্রাচীর ভেঙে জল বের করতে হয়। দুর্গাপুরের একাধিক শিল্প কারখানাও স্তব্ধ হয়ে যায়। বহু কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে।
দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘নিকাশি নালা বুজিয়ে নির্মাণ করা হলে তা সম্পূর্ণ বেআইনি। বাসিন্দাদের কাছে অনুরোধ, নির্দিষ্ট করে অভিযোগ জানান। পুরসভা কঠোর পদক্ষেপ নেবে।’
বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় বৃষ্টি হয় দুর্গাপুরে। দু’দিন মিলে মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৬২.৮ মিলিমিটার। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জনজীবন। ভোর থেকেই জলমগ্ন শহরের ছবি ভাইরাল হতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অবৈধ প্রমোটারিরাজ নিয়ে সরব হন মানুষ। তারই মাঝে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশ একটি বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন। তাঁদের দাবি, আর্যাবর্ত থেকে বিধানপার্ক সেক্টর ওয়ান হয়ে একটি ৩০ ফুট চওড়া বিশাল নিকাশি নালা ছিল। এমএএমসি, ফুলঝোড় সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জল এই নালা দিয়ে বেরিয়ে যেত। দুর্গাপুর পুরসভার কর্মরত এক প্রভাবশালী কর্মী সেখানে বাড়ি তৈরি করেন। তাঁর অঙ্গুলি হেলনে ৩০ ফুটের নালার একাংশ বুঝিয়ে সেখানে ২০ ফুটের রাস্তা বানিয়ে দেওয়া হয়। এনিয়ে এদিন তুমুল বিক্ষোভ হয়। এখানকার বাসিন্দা জেমুয়া ভাদুবালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জইনুল হক বলেন, ‘নিকাশি নালা বুজিয়ে রাস্তা সহ একাধিক নির্মাণ হওয়ার কারণেই আমাদের এই দুর্দশা।’ এমএএমসি মর্ডান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগে আমাদের এলাকার জল নিকাশি নালা দিয়ে বেরিয়ে যেত। এখন নির্বিচারে আবাসন নির্মাণ হচ্ছে। তাতেই এই সমস্যা।’
একই ছবি ৫৪ ফুট এলাকাতেও। বিপুল জল জমে যাওয়ায় মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েন। ফ্ল্যাটের উপরে আটকে পড়ে সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকেন তাঁরা। তামলা বস্তি এলাকা, মহালক্ষ্মীপার্ক, সারদাপল্লি সিটিসেন্টারের অম্বুজাতেও একই সমস্যা দেখা যায়। বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল। দুর্গাপুর এনআইটির সামনের রাস্তায় জলের স্রোতে বাইক ভেসে হাইড্রেনে চলে যায়। কোন রকমে প্রাণে বাঁচেন বাইক আরোহী। নাসির এভিনিউ, লেলিন সরণি, জাকির হোসেন এভিনিউ, এন এন বসু রোড সহ শিল্পাঞ্চলের নানা রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় বাণিজ্যও স্তব্ধ হয়ে যায়। দুর্গাপুর স্মল ইন্ড্রাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রতন আগরওয়াল বলেন, ‘লক্ষ লক্ষ টাকা কর দেওয়া হয়। অথচ, এখানে নিকাশি পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে না।’ দুর্গাপুর পুরসভার কমিশনার একে আজাদ ইসলাম বলেন, ‘পুজোর সময়ে শহরে বেপরোয়াভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। তার জেরেই নিকাশি নালা বুজে গিয়েছিল। আমরা জাল দিয়ে তা তুলেছি। কারখানার নিকাশি নালা সংশ্লিষ্ট সংস্থাই দেখে।’ রানিগঞ্জের যাদব পাড়া এলাকা ও অণ্ডাল রেল কলোনিও এদিন জলমগ্ন হয়ে পড়ে।