পানায় ভর্তি ছাড়িগঙ্গা, জীবিকা হারানোর আশঙ্কায় পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা
বর্তমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, কাটোয়া: পূর্বস্থলীর ছাড়িগঙ্গা ভরে উঠছে কচুরি পানায়। সেই পানা ঠেলে নৌকা বিহার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পর্যটকদের। ‘গরিবের অ্যামাজন’ চুপির চর বিপন্ন হতে বসেছে পানায়। দেশি-বিদেশি পাখির ছবি তুলতে চিত্রগ্রাহকদের ভিড় বাড়ছে। পর্যটন মরশুমের শুরুতেই বিপাকে পড়েছেন নৌকার মাঝিরা।
পূর্বস্থলীর চুপির পাখিরালয় পর্যটকদের, বিশেষত পক্ষীপ্রেমিকদের পছন্দের জায়গা। ভিন রাজ্য থেকেও পর্যটকরা আসেন এখানে। পাখির ছবি তুলতে নামী চিত্রগ্রাহকদের সারা বছরই আনাগোনা লেগে থাকে। চুপির ছাড়িগঙ্গা ও ভাগীরথী নদীর মূল সংযোগকারী রাস্তাটি রাজারচর দিয়ে যেতে হয় নৌকা করে। ওটিই ভাগীরথী থেকে ছাড়িগঙ্গায় জল আসার মূল চ্যানেল। সেই রাস্তার দু’ ধারে জঙ্গল পেরিয়ে প্রাচীন মায়াপুরের দিকে যেতে হয়। কারণ সেখানেও প্রচুর বিদেশি পাখির আগমন ঘটে। নৌকার মাঝি থেকে পর্যটকরা ওই চ্যানেলের নাম দিয়েছেন ‘গরিবের অ্যামাজন’। এর টানে প্রচুর পর্যটক শীতের মরশুমে আসেন। সৌন্দর্য উপভোগ করেন। ওই রাস্তাও পলি পড়ে ক্রমশ বুজে যাচ্ছে। ড্রেজিং না করলে আগামী দিনে চুপির ছাড়িগঙ্গায় জল ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি কচুরি পানায় ভরে যাওয়ায় পাখিরা খাবার পাচ্ছে না। ফলে অদূর ভবিষ্যতে পাখি আসাও বন্ধ হয়ে পারে। এইভাবে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চুপির পর্যটনকেন্দ্র। এখানে বহু মাঝি রয়েছেন যাঁরা পর্যটকদের নৌকা বিহার করিয়ে জীবিকা অর্জন করেন। পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরাও জীবিকা হারাবেন। পাশাপাশি চুপির পাখিরালয়কে ঘিরে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে অসংখ্য কটেজ, হোটেল তৈরি হয়েছে। সেগুলিও বন্ধ হয়ে যাবে। কয়েক হাজার মানুকের রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে।নৌকার মাঝি বাবু শেখ, সাহাবুদ্দিন শেখ বলেন, গরিবের অ্যামাজন এবার কচুরি পানায় ভরে গিয়েছে। মরশুমের শুরুতেই এমন অবস্থা হলে খুব মুশকিল। আমরা সারা বছর পর্যটন মরশুমের দিকে তাকিয়ে থাকি। এবার বর্ষায় পানা আরও বেশি পরিমাণে একজায়গায় জমে যাচ্ছে।
গত বছর চুপির পাখিরালয় পরিদর্শন করেন সেচদপ্তর, বনদপ্তর, বায়োডাইভারসিটি বোর্ড সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। বায়োডাইভারসিটি বোর্ড পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, চুপির জল দূষিত হয়ে গিয়েছে। তারপর সেচদপ্তর কচুরি পানা পরিষ্কার করার আশ্বাসও দেয়। কিন্তু মাঝিদের অভিযোগ, প্রশাসন থেকে মাত্র ১০ শতাংশ পানা সরানো হয়েছে। মাঝিরা নিজেদের খরচে বাকি পানা সরিয়েছিলেন। চুপির সংস্কার না হলে আগামী দিনে পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যাবে, বহু মানুষ জীবিকা হারাবেন। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, চুপির ছাড়িগঙ্গা কচুরি পানায় ভরে গিয়েছে। তা ঠেলে যাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। আমরা সেচদপ্তরকে শীঘ্র জানাব। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের চুপি এলাকায় ছাড়িগঙ্গায় তিনদশকের বেশি সময় ধরে উত্তর এশিয়া, ইউরোপ, ক্যাস্পিয়ান সাগর, সাইবেরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে আসে পরিযায়ী পাখিরা। পূর্বস্থলীর চুপিতেই প্রায় ৮১টি প্রজাতির ১০ হাজার ৭৬০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে। এরমধ্যে আবার ১৩টি বিলুপ্তি প্রজাতির। বিদেশি পাখি দেখতে পর্যটকদের প্রথম পছন্দ চুপি। যা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে।-নিজস্ব চিত্র