• শান্তিনিকেতনে ছাতিমের গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, এড়িয়ে চলার পরামর্শ
    বর্তমান | ১৮ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: ছাতিমের কথা সামনে এলেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্র সাহিত্যের নানা কথা। শান্তিনিকেতনে ছাতিম গাছ বিভিন্নভাবে সমাদৃত। সাতটি করে পাতা থাকার কারণে শান্তিনিকেতনের সূচনা লগ্ন থেকে ছাতিম, সপ্তপর্ণী নামেও পরিচিত। সর্বত্র এর রূপ প্রশংসিত হলেও ছাতিম ফুলের গন্ধের জন্য বাসিন্দাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। গত কিছুদিন ধরে ‌বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত উগ্র গন্ধে রাস্তায় চলাফেরাই দায় হয়ে উঠেছে পথচারীদের। মাথাব্যথা, হাঁপানি বা অন্যান্য সমস্যা হচ্ছে। অ্যালার্জির সমস্যা থাকা বাসিন্দাদের সতর্ক করছেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা।‌ বেশি গন্ধ নাকে ঢুকলেই ভোগাতে পারে ছাতিম ফুল। তাই এইসময় বাড়ির আশপাশে ছাতিমগাছ থাকলে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। 


    ছাতিম গাছকে নিয়ে বিচিত্র ও মজার মজার গল্প রয়েছে। চীনে এই গাছ পরিচিত ডেভিলস প্লান্ট নামে। চীনারা মনে করেন, এই গাছ থেকে ভূতুড়ে গন্ধ ছড়ায়। তাই তারা এর ধারে কাছে ঘেঁষতে চান না। তবে আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে এই গাছের ছাল দারুণ কার্যকর। ‌বিশেষত পেট খারাপ জাতীয় সমস্যা হলে এই ছালের নির্যাস থেকে তৈরি ওষুধ দারুন উপকারী বলে জানাচ্ছেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া বিশ্বভারতীতে ছাতিম গাছের বিশেষ কদর রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হলে সমাবর্তন উৎসবে শংসাপত্র হিসেবে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ছাতিম পাতা। শিক্ষার্থীদের কাছে যা অত্যন্ত সম্মানের। একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী পড়ুয়াদের হাতে এই ছাতিম পাতা তুলে দিতেন। 


    মূলত অক্টোবরের শুরুতে ছাতিম গাছের ফুল ফোটা শুরু হয়। ‌দূর থেকে বাতাসে ভেসে আসা মৃদু গন্ধ অনেকে উপভোগও করেন। কিন্তু ছাতিম গাছের আশপাশে যাঁদের বাড়ি তাঁরা এর গন্ধে কার্যত অতিষ্ঠ। বোলপুর শহরের রাস্তাঘাটে ছাতিম গাছের সংখ্যা নেহাত কম নয়। মসজিদ রোড, শান্তিনিকেতন রোড, রতনপল্লি, পূর্বপল্লি, গুরুপল্লি প্রভৃতি নানা জায়গায় প্রচুর পরিমাণে রয়েছে এই গাছ। তাই চলাফেরার সময়ও ছাতিম ফুলের উগ্র গন্ধে শ্বাস নিতে অনেকেরই কষ্ট হচ্ছে। উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ তথা বিশ্বভারতীর বোটানি বিভাগের অধ্যাপক বম্বা দাম বলেন, ছাতিম গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম অ্যালস্টোনিয়া স্কলারিস। বিকেল ও সন্ধ্যার সময় এই ফুলে মথ বিচরণ করে বলেই এর পোলেন তথা রেণু থেকে তীব্র গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। বীরভূম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ছাতিম গাছের সুফল ও কুফল দুই আছে। এর ছাল পেট খারাপের জন্য খুব ভালো ওষুধ। অপরদিকে এই ফুলের গন্ধ শ্বাসকষ্টের অন্যতম বড় কারণ। বিভিন্ন অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্ট তথা হাঁপানি আক্রান্তদের কাছে এই গাছের ফুল মারাত্মক ক্ষতিকারক। তাই যথাসম্ভব এই গাছের ফুল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
  • Link to this news (বর্তমান)