ক্ষতিকারক পদার্থ পূর্ণিমা কান্দুর শরীরে, তথ্য ময়না-তদন্ত রিপোর্টে
এই সময় | ১৮ অক্টোবর ২০২৪
এই সময়, পুরুলিয়া: ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলার পূর্ণিমা কান্দুর মৃত্যু ঘিরে জমাট বেঁধেছিল রহস্য। তাঁর মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস, বিজেপি। কাকিমার মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে দাবি করেছিলেন ভাইপো মিঠুন কান্দুও। তিনিও সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার প্রয়াত পূর্ণিমা কান্দুর ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট নিয়ে মুখ খুললেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।এ দিন তিনি বলেন, ‘শরীরে ক্ষতিকারক কিছু ছিল। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ এর আগে পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, ভিডিয়োগ্রাফারের উপস্থিতিতে সমস্ত এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) মেনে করা হয়েছে ময়না-তদন্ত। গত শুক্রবার রাতে বাড়ির ভিতরেই অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায় পূর্ণিমা কান্দুকে। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ২০২২ সালের ১৩ মার্চ ঝালদার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন কান্দুকে গুলি করে খুন করে আততায়ীরা।
তার পর থেকেই বার বার খবরে উঠে আসেন তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা। তিনি নিজেও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত দাবি করে হাই কোর্টেও যান তিনি। ত্রিশঙ্কু ঝালদা পুরসভায় উপ পুরপ্রধানও হন পূর্ণিমা। এর মধ্যে একাধিকবার নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁকে সংশয় প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হলেও পরে তা তুলে নেওয়া হয় বলে ক্ষোভপ্রকাশও করেন পূর্ণিমা।
এর পর তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে ফের তোলপাড় শুরু হয় ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া ঝালদায়। এ দিন ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট নিয়ে মিঠুন কান্দুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনও রিপোর্ট আমাদের কাছে আসেনি। তবে মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয় তা আরও স্পষ্ট হলো। তদন্ত সম্পূর্ণ হলে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।’ মায়ের শরীরে কী ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ থাকতে পারে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পূর্ণিমার ছেলে দেব কান্দু।
তিনি বলেন, ‘আমার মা যে ঘরে থাকতেন সেখানে সন্দেহজনক কোনও শিশি বা পদার্থ পাওয়া যায়নি। বাবার মৃত্যুর পর ঘুমের ওষুধ খেতে হতো মাকে।’ মাস দেড়েক আগে তা নিয়ে বকাবকিও করেন দেব। তবে মায়ের মৃত্যু যে অস্বাভাবিক তা এখনও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘ঘটনার দিন মা মাত্র ৪৫ মিনিটের জন্য একা ছিলেন। সেই সময়ে বোনকে নিয়ে পাশের পাড়ায় মামার বাড়িতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, মা অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।’
আপাতত পূর্ণিমার ওই ঘর পুলিশ সিল করে প্রহরা বসিয়ে দিয়েছে। অপেক্ষা করা হচ্ছে ফরেন্সিক দল আসার। ফরেন্সিক দল কিছু খুঁজে পায় কিনা সেই অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ। এ দিকে নতুন এই তথ্যে সুর আরও চড়িয়েছে বিরোধীরা। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘মাত্র ৪২ বছরের এই মহিলার এ ভাবে মৃত্যু কখনই স্বাভাবিক নয়। সম্পূর্ণ রিপোর্ট আসুক। প্রকৃত তদন্ত চাই।’
জেলা বিজেপি সভাপতি বিবেক রাঙ্গার বক্তব্য, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এটি হত্যা। সেদিকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ওঁর পেটে বিষাক্ত কিছু পাওয়া গিয়েছে। তপন কান্দু হত্যার সঙ্গেও যোগ থাকতে পারে। অন্তরালে বড় কেউ আছে। প্ল্যানিং করে করা হয়েছে সব কিছু।’ তবে পুলিশি তদন্তের উপর ভরসা রেখে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘তদন্ত এগিয়ে চলেছে। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হবে।’