আসফাকুল্লা বলেন, ‘‘আমরা ক্ষুণ্ণ। কেন উনি কুণালের সঙ্গে দেখা করলেন, জানি না। আমরা এর প্রতিবাদ করছি না। তবে আমরা দুঃখ পেয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে দেখা করে কথা বললে আমাদের সমস্যার সমাধান হলেও হতে পারে। কিন্তু কুণাল ঘোষের সঙ্গে কথা বলে এর কোনও সমাধান হবে বলে আমাদের মনে হয় না।’’
আন্দোলন প্রসঙ্গে আসফাকুল্লা আরও বলেন, ‘‘আমরা জানি, সব যুদ্ধে জেতা যায় না। কিন্তু রণাঙ্গনে সক্রিয় থাকতে হয়। তার ফলেই ইতিমধ্যে অনেক কাজও হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার এই আন্দোলনের ফলেই হয়েছে।’’
নারায়ণের সঙ্গে কুণালের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে একটি বিবৃতিও দিয়েছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস (জেপিডি)। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধি কি না, আমরা জানি না। ব্যক্তিগত এক্তিয়ারে তিনি কারও সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার এবং জনগণের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে দৌত্যের অধিকার তাঁকে কেউ দেননি। তিনি এমন এক জনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যিনি প্রতিনিয়ত এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের অতি কদর্য ভাষায় আক্রমণ করছেন। আমরা মনে করি, নারায়ণবাবু আন্দোলনে পরিপন্থী ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর এই আচরণকে আমরা সমর্থন করছি না।’’ জেপিডি-র মতো অন্যান্য চিকিৎসক সংগঠনেরও একই মত।
ফেডারেশন অফ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (এফইএমএ) বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও অনুমোদিত প্রতিনিধি নন। এফইএমএ-র আলোচনা এবং সহযোগিতার প্রক্রিয়ার সঙ্গেও তিনি যুক্ত নন। উনি নিজ দায়িত্বে যে বৈঠক করেছেন, তা এফইএমএ-র মতামতকে ব্য়ক্ত করে না। বিচারের দাবিতে এই আন্দোলনকে ছোট করার কোনও আচরণকে আমরা স্বাগত জানাতে পারছি না। জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির সঙ্গে আমরা একমত।’’
আরজি কর-কাণ্ডের পর জুনিয়র ডাক্তারেরা যে আন্দোলন শুরু করেছেন, প্রথম থেকেই সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন নারায়ণ। তিনি বামপন্থী মনোভাবাপন্ন। সিঁথির মোড় এলাকায় দিনের পর দিন প্রতিবাদ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। মানববন্ধন থেকে শুরু করে রাতদখল, প্রথম সারিতেই বরাবর দেখা গিয়েছে এই চিকিৎসক ‘নেতা’কে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি আচমকা দেখা করেন কুণালের সঙ্গে। বেশ কিছু ক্ষণ একান্তে দু’জনের বৈঠক হয়। ধর্মতলার যেখানে অবস্থান করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, তার এক কিলোমিটারের মধ্যে নারায়ণ-কুণাল বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে নারায়ণ বলেন, ‘‘আমি এক জন নাগরিক। আমি এক জন চিকিৎসক। কুণাল ঘোষও এক জন নাগরিক এবং সাংবাদিক। আমরা দেখা করেছি, কথা বলেছি। আগেও আমাদের পরিচয় হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলিনি আমি।’’ তবে কী নিয়ে কথা হয়েছে, সে ব্যাপারে দু’জনের কেউই মুখ মুখ খোলেননি। পরে নারায়ণ সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। তাতে লেখেন, ‘‘জুনিয়রদের ভালর জন্য যা করার, করেছি। আমি প্রথমে মানুষ, তার পরে ডাক্তার, তার পরে আমার রাজনৈতিক সত্তা।’’
তাতেও অবশ্য চর্চা থামেনি। রাতে একটি ভিডিয়োবার্তায় নারায়ণ বলেন, ‘‘আদালতে মামলা চলছে। তা সময়সাপেক্ষ। এই পরিস্থিতিতে আলোচনার টেবিলে বিষয়টিকে আনা যায় কি না, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের ব্যক্তির কাছে যাতে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই কারণেই আমি গিয়েছিলাম।’’ তবে জল্পনা সহজে থামছে না। এই বৈঠককে যে ভাল চোখে দেখা হচ্ছে না, ডাক্তারদের তরফে তা স্পষ্ট করে দেওয়া হল।