পরীক্ষা ছাড়াই বাংলার গাড়িকে সিএফ বিহারের কিছু সেন্টারের, কেন্দ্রকে চিঠি রাজ্যের
প্রতিদিন | ১৮ অক্টোবর ২০২৪
নব্যেন্দু হাজরা: পরীক্ষার জন্য গাড়ি আর নিয়ে যেতে হচ্ছে না টেস্টিং সেন্টারে। শুধু টাকা দিলেই মিলে যাচ্ছে ফিট সার্টিফিকেট (সিএফ)। আর সেই সার্টিফিকেট আবার দিচ্ছে ভিনরাজ্যের কিছু অটোমেটেড টেস্টিং সেন্টার। মানে এরাজ্যের রেজিস্টার্ড গাড়িকে সিএফ দেওয়া হচ্ছে অন্য রাজ্য থেকে। দু-একটি গাড়ি নয়। ইতিমধ্যেই এমন প্রায় দুহাজার গাড়ি চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো বিহার বা অন্য কোনও রাজ্য থেকে সিএফ করানো হয়েছে। এবং সেখানকার অটোমেটেড টেস্টিং সেন্টারে (এটিএস) গাড়ি না নিয়ে গিয়েই মিলেছে এই সার্টিফিকেট।
পরিসংখ্যান দিয়ে বিষয়টি জাতীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের নজরে এনেছে রাজ্য সরকার। তাদের দাবি, এক্ষেত্রে একদিকে যেমন রাজ্যে রাজস্ব লোকসান হচ্ছে, তেমনই আনফিট গাড়িও সিএফ পেয়ে যাচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ছে। নবান্নের এক আধিকারিকের কথায়, মূল কাণ্ডটা ঘটাচ্ছে বিহারের কিছু এটিএস। অথচ দুর্ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে দায় পড়বে এরাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের। পশ্চিম বর্ধমান, উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার গাড়ি বিহারের এটিএস থেকে সিএফ করিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ।
জাতীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রককে দেওয়া চিঠিতে রাজ্য সরকার বিহারের কয়েকটি এটিএসের নাম উল্লেখ করে লিখেছে, সেখান থেকে এই সিএফ দেওয়া হয়েছে। এমনকি সেখানে গাড়ি নিয়েও যেতে হয়নি মালিকদের। হোয়াটসঅ্যাপে গাড়ির নম্বর এবং অনলাইনে টাকা দিয়ে দিলেই এই সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে। একটি গাড়ির নম্বর দিয়ে লেখা হয়েছে, এখানে আটক থাকা অবস্থায় ওই গাড়িটি সিএফ পেয়েছে বিহারের একটি এটিএস থেকে। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসকের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে লেখা হয়েছে, সে জেলার ৫৭টি গাড়ির রাজ্যের বাইরে থেকে সিএফ-সহ অন্যান্য সার্টিফিকেট নিয়েছে। যেগুলোর জন্য সরকারের ১৪ লক্ষ ৩৭ হাজার ১০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পরিবহণ দপ্তরের এক কর্তার কথায়, পণ্যবাহী ট্রাক বা বাস গোটা দেশেই চলাচল করে। সেদিকে লক্ষ রেখেই কেন্দ্র নিয়ম করেছিল, যেসমস্ত গাড়ির আন্তঃরাজ্য পারমিট রয়েছে, তাঁরা যে কোনও রাজ্য থেকেই তাঁদের গাড়ির সিএফ করিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই নিয়মের অপব্যবহার করছে কিছু এটিএস এবং গাড়ির মালিকরা। তাই রাজ্যের আবেদন, এক্ষেত্রে যেন অবশ্যই এটিএসে গাড়ির সিএফ পরীক্ষার ভিডিও বাহন পোর্টালে আপলোড করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এবং যে রাজ্যের রেজিস্টার্ড গাড়ি তারা এই সিএফের টাকা পায়।
দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, দেখা যাচ্ছে শুধু টাকা দিলেই বিহার-সহ একাধিক রাজ্যের এটিএস এরাজ্যের রেজিস্টার্ড গাড়িকেও সিএফ দিয়ে দিচ্ছে। গাড়িগুলোকে সেখানে নিয়েও যেতে হচ্ছে না। এগুলো ফিজিক্যালি চেকিং ছাড়াই পেয়ে যাচ্ছে সিএফ। ফলে গাড়িগুলো আদৌ ফিট কি না তা দেখা না হলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে। এক্ষেত্রে জাতীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের বিষয়টি দেখা উচিত। ইতিমধ্যেই ১৯০০ গাড়ি এরকম চিহ্নিত করা হয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে।