এইসময়, কোচবিহার: পনেরো বছর আগে মদের আসরে বাবাকে মারধর করেছিল তাঁর এক গ্লাসের বন্ধু। মার খাওয়ার দিন সাতেকের মধ্যেই মারা যান বছর চল্লিশের রামযতন মাহাতো। বাবার মৃত্যুর পিছনে পেশায় লটারি বিক্রেতা শ্যামল ঘোষ (৫৫)কে মনে মনে দায়ী করেছিল মৃতের নাবালক পুত্র। তখন থেকেই বাবার মৃত্যুর বদলা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে সে। এরপর কেটে যায় এক যুগেরও বেশি সময়। বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে সেই অভিযুক্তকেই মাঝেমধ্যে মদের আসরে ডাকত বছর পঁচিশের যুবক।গত মঙ্গলবার ওই মদের আসরেই খুন করে বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিল ছেলে। না, কোনও সেলুলয়েডের গল্প নয়, মাথাভাঙা থানার কালীবাড়ির ঘটনা৷ খুনের তিন দিন পর বৃহস্পতিবার মানসাই সেতুর কাছ থেকে অভিযুক্ত অজয় মাহাতোকে গ্রেপ্তার করেছে মাথাভাঙা থানার পুলিশ৷ কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিমেষ রায় বলেন, ‘খুনের পিছনে রয়েছে বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ৷’ অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার মাথাভাঙা আদালতে তোলা হলে দশ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেছে আদালত৷
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অজয়ের বাবা রামযতন ও খুন হওয়া শ্যামল একই গ্রামে থাকার সুবাদে প্রায়ই একসঙ্গে মদের আসরে যেতেন। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বচসার জেরে একদিন শ্যামল মারধর করেন রামযতনকে। তার দিন কয়েকের মধ্যেই মারা যান তিনি। অজয়ের দৃঢ় ধারণা হয়, শ্যামলের মারেই মৃত্যু হয়েছে তার বাবার। তখন থেকেই বাবার এক গ্লাসের ‘বন্ধু’র বিরুদ্ধে রাগ পুষে রেখে বদলা নেওয়ার ফন্দি আঁটতে থাকে অজয়। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে বাবার মদের আসরের সঙ্গীকেই নিজের মদ খাওয়ার সঙ্গী করে নেয় ছেলে।
উদ্দেশ্য, বাবার মৃত্যুর বদলা নেওয়া। সেইমতো মঙ্গলবার রাতে শ্যামলকে মদের লোভ দেখিয়ে আসরে ডেকে নিয়ে যায় সে। এরপর রাতের অন্ধকারে মদ খাইয়ে ঠান্ডা মাথায় খুন করে বলে পুলিশের অনুমান। মাথাভাঙা থানার কালীবাড়ি বাঁধ লাগোয়া এলাকায় মঙ্গলবার রাতে শ্যামলের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ৷ দেহটি খোলা মাঠে উবু হয়ে পড়েছিল৷ গলায় ছিল ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন৷
মৃতের স্ত্রীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ৷ তারপরই বদলা নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। নিহতের ভাইপো পরিতোষ ঘোষ বলেন, ‘কাকার পরিচিত হয়ে অজয় এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে শুনে অবাক হয়েছি আমরা। কাকাকে মাঝেমধ্যে ডেকে নিয়ে মদ খাওয়াতে নিয়ে যেত। আমরা ওর উপযুক্ত শাস্তি চাই।’
এলাকাবাসীর দাবি, মানসাই নদীর বাঁধ লাগোয়া এলাকায় রাতে মদের আসরে হামেশাই শ্যামলের সঙ্গে দেখা যেত অজয় ওরফে গোর্খাকে৷ পুলিশের জেরায় অভিযুক্ত যুবক খুনের কথা স্বীকার করেছে।