• তরুণী ‘ধর্ষণ, খুন’-এর দিন রাহুলের 'লোকেশন' ছিল কৃষ্ণনগর শহরই
    এই সময় | ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • গত মঙ্গলবার ঘটনার রাতে প্রায় ১০টা অবধি ধৃত রাহুল বসু এবং ওই তরুণী কৃষ্ণনগর শহরেই ছিল। তবে দু’জনের সেই দিন দেখা হয়নি বলেই প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে। আর ওই দিনেই যে ফোনে রাহুল ওই তরুণীর সঙ্গে ‘ব্রেক আপ’ করেছিল তাও নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। কৃষ্ণনগরে তরুণীকে ‘গণধর্ষণ ও খুনে’র ঘটনার তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে জেলা পুলিশ।পুলিশের দাবি, ‘নির্যাতিতা’-র শরীরে মেলেনি ‘বার্ন ইনজুরি’ ছাড়া অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। ধর্ষণ করা হয়েছে, এমন কোনও প্রমাণও মেলেনি। এমনকী শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়েছে-তাও নয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা পুলিশকে অন্তত এমনটাই জানিয়েছেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। ঘটনাস্থল থেকে দেশলাই ও দাহ্য পদার্থ ভর্তি একটি বোতল উদ্ধার হয়েছে। সন্দেহ, তাতে কেরোসিন ছিল। ময়নাতদন্তে এটাও স্পষ্ট হয়েছে, জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। তবে তদন্তে এখনও অবধি ঘটনা খুন না আত্মহত্যার তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

    কৃষ্ণনগর জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ কে এই সময় অনলাইন-কে ফোনে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে যৌন নিগ্রহের কিছু আমরা পাইনি। শরীরের বাইরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। রিপোর্ট হাতে পেলে আরও কিছু জানা যাবে। ঘটনার রাতে ধৃত যে একটা সময় অবধি কৃষ্ণনগরেই ছিল তা স্পষ্ট হয়েছে।’

    জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন দীর্ঘক্ষণ কৃষ্ণনগর কলেজ মাঠে ছিলেন ওই তরুণী। আশেপাশেই ছিল ওই যুবক। কৃষ্ণনগর শহরেই ছিল তার লোকেশন। তবে দু’জনের দেখা হয়নি বলেই প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। ফোনে তাঁদের কথা হয়। ফোনেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল ধৃত রাহুল। এরপর রাত ১১টা ১৫ নাগাদ বাড়ি ঢুকে যায়। রাত ১টা পর্যন্ত অন্য একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সে। ওই তরুণী বেশ কিছুটা রাত অবধিই মাঠে ছিল। তাঁকে তাঁর কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী সেখানে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। এরপর কী ভাবে পুজো মণ্ডপে গেলেন তিনি, ঠিক কী ঘটেছিল, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘এই মিসিং লিঙ্ক জুড়ে দিতে পারলেই তদন্তে অনেকটা এগিয়ে যাবে।’

    এরই মধ্যে ‘নির্যাতিতা’-র হোয়াটস অ্যাপ স্ট্যাটাস ও ফেসবুক স্টোরি আরও কিছুটা চিন্তা বাড়িয়েছে পুলিশকে। দু’জায়গাতেই ওই তরুণী স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্তে এ দিকটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

    বুধবার সকালে কৃষ্ণনগর শহরে এক তরুণীর অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ভোরের দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা পুজো মণ্ডপের পাশেই ওই তরুণীর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণের পরে খুন করা হয় মেয়েকে। তাঁকে যাতে কেউ চিনতে না পারে তার জন্য পোড়ানোর চেষ্টা করা হয়। ঘটনার পর তাঁর ‘প্রেমিক’ রাহুল বসুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনায় বুধবারই পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার অপহরণ, গণধর্ষণ, খুন, অ্যাসিড বা অনুরূপ কিছু ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া, প্রমাণ লোপাট এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা রুজু করেছে।

    শুক্রবার ঘটনাস্থলে আসে ফরেন্সিক টিম। বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। পুলিশ সুপার বলেন, ‘রিপোর্ট আসলেই সবটা বলা যাবে।’ তবে বোতলে যে কেরোসিনই ছিল, তা একটি সূত্রে নিশ্চিত করা হচ্ছে।

    এ দিন ওই গলিতে প্রশাসনের তরফ থেকে আলো লাগানো হয়েছে। পুলিশ সিসিটিভি লাগিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ‘পুলিশ সুপারের বাংলো, সরকারি আবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার একটি গলিতে এতদিন আলো ছিল না, এটা কি মেনে নেওয়া যায়!’
  • Link to this news (এই সময়)