এই সময়, কৃষ্ণনগর: ফেসবুক পোস্টের পরে এ বার কৃষ্ণনগরের তরুণীর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় নতুন বাঁক। শুক্রবার সকাল থেকে একটি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়। ‘এই সময়’ ওই অডিয়োর সত্যতা যাচাই না করলেও সেখানে একটি মহিলা কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমি একাই দায়ী। কোনওদিন কাউকে দোষী করিনি। আর কাউকে দোষী করবও না। আমার এই সিচুয়েশনের জন্য কেউ দায়ী নয়। না আমার ফ্যমিলি, না আমার ফ্রেন্ড সার্কেল, না আমার রিলেশনশিপ। আমার বন্ধু-বান্ধবীরাও কেউ এর মধ্যে নেই। আমার মা-বাবা আমার পরিবারের যাঁরা আছে, তাঁরাও নেই। আমার ‘উড বি’ যে সে-ও নেই। তাঁর ফ্যামিলিও নেই।’পরিচিতদের দাবি, ওই গলার স্বর মৃত তরুণীর। ওই অডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরে প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি সত্যিই তরুণীর নিজের বয়ান, নাকি তাঁকে চাপ দিয়ে এরকম ভয়েস রেকর্ডিং করানো হয়েছিল। যদি তিনি আত্মহত্যা করেও থাকেন, তা হলে কাউকে দোষী না করার জন্য এত কথা গুছিয়ে বললেন কী করে? মৃত ছাত্রীর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এ দিন বলেন, ‘এটা যদি সত্যি ওর গলা হয়েও থাকে, তবে আমাদের দৃঢ় ধারণা খুনের আগে ভয় দেখিয়ে এগুলো বলানো হয়েছে। ভয় পাওয়ার একটা সুর আছে গলাতে। তা ছাড়া কাউকে দোষী না করার কথাগুলো তো একদম উকিলের বয়ানের ঢঙে বলা। এত কথা গুছিয়ে বলতে পারে কেউ?’
শুক্রবার দুপুর সওয়া একটার পরে দুই সদস্যের একটি ফরেন্সিক টিম ঘটনাস্থলে এসে কিছু নমুনা সংগ্রহ করে। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে পুলিশ সুপারের অফিসের কাছে দুর্গাপুজোর না-খোলা মণ্ডপের ভিতরে ও বাইরের ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখেন তাঁরা। সঙ্গে আনা লেজার স্ক্যানার দিয়ে মণ্ডপের ভিতরে যেখানে মৃতদেহ পড়ে ছিল সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। মণ্ডপের সিলিংয়ের কাপড়ের পোড়া অংশও নিয়ে যান বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার কল্যাণীতে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পরে চিকিৎসকরা প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিলেন, এটি ‘অ্যান্টিমর্টেম বার্ন।’ অর্থাৎ জীবন্ত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা। তবে কিছু কেমিক্যাল টেস্ট বাকি থাকায় জানা যায়নি এটা আগুনে পুড়িয়ে খুন, নাকি আত্মহত্যার ঘটনা। শুক্রবার ফরেন্সিক টিমের তদন্ত শেষে জেলা পুলিশ মনে করছে মণ্ডপ চত্বরেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটেছে তরুণীর। বাইরে থেকে দেহ এখানে এনে ফেলা হয়নি।
কৃষ্ণনগরের জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে এদিন বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে ফরেন্সিক টিম নমুনা সংগ্রহ করেছে। সেখানে একটি বোতলে লাইট ব্লু লিকুইড মিলেছে। কেরোসিনের গন্ধও পাওয়া গিয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনা ওখানে ঘটতে পারে। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখা এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গেও কথা
বলা হয়েছে।
এ দিন বিকেলে মৃত তরুণীর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন কৃষ্ণনগর ও কলকাতার একটি চিকিৎসক দল। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস এক সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ ঠিক ভাবে তদন্ত করছে না।’
ঘটনাস্থলে এ দিন দেখা যায় দিনের বেলাতেও স্ট্রিট লাইট জ্বলছে। লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ছাত্রী খুনের ঘটনায় তদন্তকারী অফিসার সুমিত দেকে বদল করে কৌশিক সাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।