• মদের আসরে পাওনা টাকা নিয়ে বচসা, ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন সুদের কারবারিকে
    বর্তমান | ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কাঁথি: কাঁথিতে মদের আসরে টাকাপয়সা নিয়ে বচসার জেরে ইট দিয়ে মাথা ও মুখ থেঁতলে খুন করা হল সুদের কারবারি এক ব্যক্তিকে। পাওনা টাকা শোধ দেওয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুব্ধ জনতা ঘটনায় মূল অভিযুক্তের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার কাঁথি থানার ধোবাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দেউলপোতা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। তেতে ওঠে পার্শ্ববর্তী পূর্ব আমতলিয়া গ্রামও। ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। নিহত সুদ কারবারির নাম গোবিন্দ পাত্র (৪৫)। বাড়ি পূর্ব আমতলিয়া গ্রামে। বৃহস্পতিবার রাতে দেউলপোতা সংলগ্ন সুন্দরদা পুলের (সাতফুকার) কাছে খালপাড়ের ধার থেকে গোবিন্দকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর মাথা থেঁতলানো এবং মুখ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ছিল। ধৃত পূর্ব আমতলিয়া গ্রামেরই বাসিন্দা উত্তম পাত্র ও বাঁটুল মাইতিকে শুক্রবার কাঁথি মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাদের সাতদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেন। নিহতের পরিবারের লোকজন উত্তম সহ কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁদের দাবি, এই ঘটনায় আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত। পুলিসকে ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান তাঁরা।  মহকুমা পুলিস আধিকারিক দিবাকর দাস বলেন, মদের আসরে টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয়ে বচসা থেকে মারধরের জেরে খুন হন ওই ব্যক্তি। তাঁর মাথা-মুখে ভারি কিছু বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়। গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে। এই ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত রয়েছে কি না, তাও জানার চেষ্টা চলছে। উত্তেজনা থাকায় এলাকায় পুলিস পিকেট বসানো হয়েছে। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।  জানা গিয়েছে, গোবিন্দ মুদির দোকান চালাতেন। সঙ্গে সুদের কারবারও। অনেকদিন আগে গোবিন্দ উত্তমকে ৭০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে গোবিন্দ তাঁকে সুদ-আসলের টাকা শোধ করার জন্য উত্তমকে চাপ দিচ্ছিলেন। গোবিন্দর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, এ নিয়েই ইদানীং গোবিন্দর সঙ্গে উত্তমের মনোমালিন্য চলছিল। বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা করেই গোবিন্দকে মদের আসরে ডেকে পাঠায় উত্তম। জানায়, সেখানে পাওনা টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এবং টাকা ফেরত দেওয়া হবে। দেউলপোতা থেকে কিছুটা দূরে শ্যামচক এলাকায় একটি অবৈধ মদের দোকান রয়েছে। রাতে সেখান থেকে মদ কেনা হয়। তারপর ফাঁকা জায়গায় আসর বসে। মদ খাওয়ার সময় গোবিন্দ টাকার প্রসঙ্গ তুলতেই তর্কবিতর্ক শুরু হয়। উত্তেজিত উত্তম পড়ে থাকা ইট নিয়ে গোবিন্দর মাথায় ও মুখে উপর্যুপরি মারতে থাকে। বাকিরা তাকে সহযোগিতা করে। মাথা-মুখ থেঁতলে দেওয়ার পর তাঁকে ফেলে দিয়ে পালায় অভিযুক্তরা। স্থানীয় লোকজন গোবিন্দকে রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখেন। ঘটনাটি জানাজানি হতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে আইসি প্রদীপকুমার দাঁর নেতৃত্বে পুলিস বাহিনী এলাকায় যায়। রাত ১০টা নাগাদ পুলিস স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় আশঙ্কাজনক গোবিন্দকে উদ্ধার করে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। এদিকে, এর আগে স্থানীয় লোকজন অভিযুক্ত উত্তম ও বাঁটুলকে একটি ক্লাবে আটকে রাখে। পুলিস রাতেই তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। শুক্রবার উত্তেজিত জনতা উত্তমের টালির চালার বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার আগে অবশ্য উত্তমের পরিবারের সদস্যরা আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নেন। পুলিস সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দমকলের একটি ইঞ্জিন আগুন নেভায়। স্থানীয় বাসিন্দা দীপক দাস বলেন, ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। আমরা পুলিসকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছি।  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)