নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: সদ্যোজাতের মৃতদেহ গায়েব নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতদেহের হদিশ পায়নি শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল। প্রতিবাদে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএমের যুব সংগঠন। অন্যদিকে, ঘটনা নিয়ে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও উড়িয়ে দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। কারণ দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার স্যুইচ বন্ধ ছিল। সমগ্র ঘটনাই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে পুলিস ও হাসপাতাল। এদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি নিয়ে তিনজনের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা নাগাদ প্রসূতি বিভাগের সামনে থেকে গায়েব হয় সদ্যোজাত পুত্র সন্তানের মৃতদেহ। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেহ উদ্ধার হয়নি। এনিয়ে গাফিলতির অভিযোগ তুলে এদিন দুপুরে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখায় ডিওয়াইএফ। ঘটনায় দায়ী স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। একই অভিযোগ তুলে নিখোঁজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এদিন সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পুরসভার-২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান আলম খান। হাসপাতালে প্রচুর লোকজন জমা হওয়ায় মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিস বাহিনী।
ডিওয়াইএফের দার্জিলিং জেলার যুগ্ম সম্পাদক শুভ্রদেব ভট্টাচার্য বলেন, সদ্যোজাতের মৃতদেহ গায়েবের ঘটনা কোনও ভাবেই মানা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। বরো চেয়ারম্যান বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশের গাফিলতিতেই ওই ঘটনা। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আগামী তিনদিনের মধ্যে দেহ উদ্ধার করে দেওয়ার আশ্বাস কর্তৃপক্ষ দিয়েছে।
ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি নিয়ে তিনজনের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাতে দু’জন চিকিৎসক ও একজন নার্স রয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, ঘটনার দিন প্রসূতি বিভাগে নার্স, ওয়ার্ড বয়, সাফাই কর্মী সহ প্রায় ১০ জন ছিলেন। তাঁদেরকে জেরা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সবটাই স্বাস্থ্য ভবনে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার ডাঃ চন্দন ঘোষ বলেন, তদন্ত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্টের ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্যদপ্তরের পাশাপাশি পুলিসও তদন্ত করছে। এদিন শিলিগুড়ি থানার আইসি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস সহ পুলিস অফিসাররা ঘটনাটি নিয়ে একাধিকবার সুপার ও হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রসূতি বিভাগ, সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম প্রভৃতি পরিদর্শন করেন। হাসপাতালের দোতলায় প্রসূতি বিভাগ। সেই ভবনে ক্যামেরার সংখ্যা ১৬টি। যার স্যুইচ বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অফ ছিল। মৃতদেহটি গায়েব হয় বৃহস্পতিবার ভোড় সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে। সেই সময় ওয়ার্ডে ঢুকেছিলেন হাউস কিপিং কর্মীরা।
হাসপাতালের একাংশের যুক্তি, রাজ্যের সেরা হাসপাতালগুলির মধ্যে এটা অন্যতম। পরপর তিনবছরে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে তিনটি পুরস্কার পেয়েছে। সম্ভবত প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই ষড়যন্ত্র। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিস কমিশনার (পূর্ব) রাকেশ সিং বলেন, ঘটনার পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র নাকি কারও গাফিলতি রয়েছে, তদন্তে তা দেখা হচ্ছে। এজন্য বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।