আগুনের কারণে পরিষেবা বন্ধ, ইএসআইতে রোগীর হয়রানি রোজই
এই সময় | ১৯ অক্টোবর ২০২৪
এই সময়: ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেল শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের দোতলা। যার জেরে শুক্রবার দিনভর রোগী পরিষেবা ব্যহত হয়। বন্ধ করে দিতে হয় আউটডোরও। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা রোগীদের হয়রানি চলে দিনভর।কিন্তু আগুনের জন্য নয়, রোগী এবং তাঁদের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে হাসপাতালে এসে হয়রানির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁদের। কেউ থ্যালাসেমিয়ার ওষুধ পাচ্ছেন না, কেউ কেমো থেরাপির ডেটের জন্য ঘুরেই চলেছেন। কারও অভিযোগ, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে হাসপাতাল! অনেকেই বলছেন, একটি আগুনের ঘটনা সামনে এনে দিয়েছে অনেকদিনের জমে থাকা ছাই-চাপা আগুনের প্রসঙ্গও।
রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের দাবি, ‘এই হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়েছিল দেড় বছর আগে। ইএসআই হাসপাতাল যেহেতু কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারের অধীনে, তাই সেই কাজ শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এখনও পুরোপুরি হয়নি।’ হাসপাতালের সুপার অদিতি দাস মন্ত্রীর এই দাবিকে মান্যতা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের হাসপাতালে ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশর আছে। কিন্তু শুক্রবার যে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল তার জন্য এই ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। এই ধরনের আগুন এ ভাবে আটকানো অসম্ভব।’ তাঁর সংযোজন, ‘২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে ফায়ার স্প্রিঙ্কলার বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি।’
এ দিন আউট ডোর এবং অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ থাকায় প্রচুর রোগীকে ফিরে যেতে হয়। যাঁরা ফিরে গেলেন তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, ‘আগুন না হয় আজ লাগল। কিন্তু এই ফিরে যাওয়ার পালা চলছে দিনের পর দিন ধরে।’
কেমন সেটা? যেমন, এ দিন হাসপাতালের সামনে ১০ বছরের পুত্র সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুভাষ মাইতি। তিনি বালি এলাকায় থাকেন। জুটমিলের শ্রমিক। সুভাষের ছেলে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। সুভাষের কথায়, ‘ছেলের একটা জরুরি ওষুধের জন্য গত তিন চার সপ্তাহ ধরে ঘুরছি। আজকেও এসেছি। কিন্তু এসে দেখলাম সব বন্ধ। বার বার অনুরোধ করছি জোকা ইএসআই-তে রেফার করে দিতে, সেখানে ওষুধটা আছে। কিন্তু সেটাও করা হচ্ছে না।’
বারুইপুর থেকেও বেশ কিছুটা দূরে শেরপুর অঞ্চলে থাকেন মকসুদা বিবি। তিনি বুটিকের কাজ করেন। কিছুদিন আগে পায়ে আঘাত পান। এসেছিলেন আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে। তাঁকেও ফিরে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এক মাস ধরে ঘুরছি। ট্রিটমেন্ট তো কিছুই হচ্ছে না। এর আগেও বার বার ফিরে যেতে হয়েছে। আগুনের জন্য এ বারও ফিরে যেতে হচ্ছে।’ ডানকুনির বাসিন্দা বরুণ পোদ্দারের মা ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবারই ভর্তি হয়েছিলেন এই হাসপাতালে।
তার আগে গত ছ’মাসের যাবতীয় টেস্ট রিপোর্ট, প্রেসক্রিপশন জমা করেন তিনি। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতাল থেকে ফোন পান যে কাগজপত্র সব হারিয়ে গিয়েছে। তাই পেশেন্টের চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছে না। এ দিন আগুন লাগার পরে বরুণের মা শোভারানিকে মানিকতলার ইএসআই হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু বরুণ মাকে মানিকতলায় রেখে এসে শিয়ালদহে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পরে বলেন, ‘হাসপাতালে কাগজপত্র জমা করার পরে আমাকে স্লিপও দেওয়া হলো। এখন বলা হচ্ছে সেটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই হয়রানির সঙ্গে আগুনের কোনও সম্পর্ক নেই। মায়ের মেডিক্যাল হিস্ট্রি না পাওয়া গেলে ডাক্তারবাবুরাও তো চিকিৎসা শুরু করতে পারছেন না। এ ভাবেই চলছে হাসপাতাল।’