• ফ্লাইট দেরি করাতেই আসত বোমার থ্রেট
    এই সময় | ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • সুনন্দ ঘোষ

    প্রি-মোবাইল যুগের কথা। নব্বইয়ের মাঝামাঝি এক সকালে বেজে উঠল কলকাতা বিমানবন্দরে এয়ারপোর্ট ম্যানেজারের ল্যান্ডলাইন। ম্যানেজার ফোন ধরতেই ভেসে এল পুরুষকণ্ঠ — ‘অমুক ফ্লাইটে বোমা রাখা আছে।’ কোথা থেকে, এমনকী কত নম্বর থেকে ফোনটি এসেছিল, তা জানার কোনও উপায় সে দিন ছিল না।তখনও নিরাপত্তা নিয়ে এত কড়াকড়ি হয়নি। তাই, সেই ফোন আসতেই হুলুস্থুল অবস্থা। নির্দিষ্ট সেই বিমানকে নিয়ে যাওয়া হলো আইসোলেশন বে-তে। আঁতিপাতি খুঁজেও বোমার ‘ব’-ও পাওয়া গেল না। মাঝখান থেকে ঘণ্টা দুয়েক দেরি হয়ে গেল উড়ান ছাড়তে। যাত্রীদের উড়ান থেকে নামিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল বিমানবন্দরের লাউঞ্জে। আবার তাঁদের একে একে চেক-ইন করানো শুরু হলো। তখনই দেখা গেল, এক ব্যক্তি হন্তদন্ত হয়ে ঢুকছেন বিমানবন্দরে। ওই ফ্লাইটেরই যাত্রী। একগাল হেসে জানালেন, ভাগ্যিস ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়েছে। সেই হাসি অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বাড়ি থেকে রওনা হতে দেরি হয়েছিল ওই যাত্রীরই। ইচ্ছা করেই উড়ান ছাড়তে দেরি করাতে তিনিই ভুয়ো বোমাতঙ্কের কল করেছিলেন সে দিন। উড়ানে আর ওঠা হয়নি তাঁর। থানায় গিয়ে জামিনে ছাড়া পান। কারণ, এ ক্ষেত্রে শাস্তির সংস্থান অল্পই।

    সে সময়ের আরও একটি ঘটনার কথা তুলে আনছেন নিরাপত্তা অফিসারেরা। সে বারেও সকালের দিল্লির উড়ানে ‘বোমা রাখা আছে’ বলে ফোন এসেছিল কলকাতা বিমানবন্দরে। তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এক ব্যবসায়ীকে। জানা যায়, ধৃত ব্যক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকা এক ব্যবসায়ীর সে দিনের সকালের উড়ানে দিল্লি গিয়ে টেন্ডারে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তিনি যাতে সময় মতো দিল্লি গিয়ে টেন্ডারে অংশ নিতে না-পারেন, তার জন্যই দেরি করিয়ে দেওয়া হয়েছিল উড়ান।

    পর পর এরকম বেশ কয়েকটি ভুয়ো বোমাতঙ্কের ঘটনার পরে বিমানবন্দরে ল্যান্ডলাইনের সঙ্গে সিএলআই (কলার লাইন আইডেন্টিফিকেশন) বসানো হয়। তাতে ফুটে উঠতে শুরু করেছিল ইনকামিং কল নম্বর। তাতে তদন্তে সুবিধা হয়ে যায় পুলিশের। কমতে শুরু করে ভুয়ো কল আসার ঘটনাও।

    ইদানীং আবার বেড়েছে সেই ভুয়ো কলের সংখ্যা। কলকাতা বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০২৩-এর জুন থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৭টি ভুয়ো কল এসেছে কলকাতায়। গড়ে প্রতি মাসে একটি করে। কিন্তু, মাত্র চার দিনের ব্যবধানে সারা দেশ জুড়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে প্রায় ২৫টি উড়ানে বোমাতঙ্কের ঘটনা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু, কেন? আগে যেমন নিজের সুবিধার জন্য, মূলত ফ্লাইট দেরি করিয়ে দিতে বোমাতঙ্কের ভুয়ো কল আসছিল, ইদানীং ঠিক সেরকম কারণ দেখা যাচ্ছে না।

    সেই কারণ খুঁজে দেখতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। দেশের সমস্ত বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ব্যুরো অফ সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি (বিসিএএস)। তার ডিরেক্টর জেনারেল জুলফিকার হাসানের কথায়, ‘এত কম সময়ের মধ্যে এতগুলো থ্রেট-কলের সঠিক কারণ বলা মুশকিল। বিভিন্ন জায়গায় লোকাল পুলিশ তদন্ত করছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাও খতিয়ে দেখছে। একটি ঘটনায় এক নাবালককে ধরা হয়েছে। সে একাই চারটি কল করেছিল।’ জানা গিয়েছে, তার এক বন্ধুকে বিপদে ফেলতে সে সেই বন্ধুর নামে ভুয়ো প্রোফাইল বানিয়ে সেখান থেকে টুইট করেছিল ওই নাবালক। জানতে পারেনি, তার সেই একটি কীর্তিতে কত যাত্রী সমস্যায় পড়েছিলেন এবং কত লক্ষ টাকা স্রেফ জলে চলে গিয়েছে।
  • Link to this news (এই সময়)