‘দ্য চাইল্ড ইজ় ফাদার অফ দ্য ম্যান’... কিন্তু এই ‘ফাদার’-এর কথা লিখে যাননি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ। এই ‘ফাদার’-এর ক্ষেত্রে হিন্দি ছবির হিট ডায়লগের মতো বলাই যায়, ‘বাপ তো বাপ-ই হোতা হ্যায়!’সর্বভারতীয় স্তরে যে ক’টি পরীক্ষা ‘কঠিন’ হিসেবে চিহ্নিত, তার অন্যতম ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট (নেট)-এ উত্তীর্ণ হয়েছেন নিউ টাউনের বাসিন্দা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রোকেয়া গণি। বছর চব্বিশের মেয়ের সঙ্গে নেটে বসেছিলেন তাঁর বাবা, সেই ‘ফাদার’ আব্দুল গণিও! ৬৪ বছর বয়সে সন্তানসমদের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে পড়েছেন। আর বৃহস্পতিবার যখন নেটের ফল বেরলো, তখন দেখা গেল মেয়ের সঙ্গেই তালিকায় জ্বলজ্বল করছে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস আব্দুল গণির নাম।
তিনি জলবায়ু, পরিবেশ ও সেই সংক্রান্ত আইন নিয়ে পিএইচডি করতে চান। আর রোকেয়ার ইচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) ব্যবহারে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইনের ভূমিকা নিয়ে পিএইচডি করার। নিউ টাউনের নামজাদা আবাসনের গণি পরিবারে এখন খুশির হাওয়া। পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কখনও বাবার কাছে কিছু বিষয় বুঝে নিয়েছেন মেয়ে, আবার বাবাও স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যানালিসিস বা কোয়ালিটি অফ টিচার্সের মতো বিষয়ে বাধ্য ছাত্রের মতো পড়াশোনা করেছেন মেয়ের কাছে।
বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রশাসনে নানা ভূমিকা সামলে ২০১৮-য় সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তরের যুগ্মসচিব থাকাকালীন এলএলবি-তে ভর্তি হন আব্দুল। ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে ওই দপ্তরের বিশেষ সচিব হয়ে অবসর নেন। জুনে এলএলএম পড়া শুরু করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণও হন। তার পরেই উচ্চতর শিক্ষার জন্য মানসিক প্রস্তুতি শুরু। এরই মধ্যে আইনজীবী পেশায় যুক্ত হওয়ার জন্য বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সর্বভারতীয় পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হন আব্দুল। ততদিনে ছোট মেয়ে রোকেয়াও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ করে নেট-এর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
নেট-এর প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আব্দুল গণি বলেন, ‘মোট ৩০০ নম্বরের মধ্যে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় সকলের জন্য একই প্রশ্ন। মূলত মাল্টিপল চয়েস পরীক্ষার জন্য মেয়ের থেকে অনেক কিছু জেনে নিয়েছি। কারণ এমন বেশ কিছু বিষয় ছিল যেগুলি আমার কম জানা। সেখানে মেয়ে আমাকে সাহায্য করেছে। আমরা ৫-৬ জন মিলে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেও পড়াশোনা করতাম। সেই গ্রুপে মেয়ে ছাড়াও আর যাঁরা আছেন, সকলেই আমার প্রায় মেয়ের বয়সি।’
আর রোকেয়া? বাবার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মেয়ে বলছেন, ‘বাবা আমলা হলেও বরাবর দেখেছি পড়াশোনার মধ্যে থাকতে। যে কোনও সাবজেক্টে বাবার মনোযোগ দেখলে অবাক হতে হয়। এমনকী নেট প্রস্তুতির সময়েও বাবা এত সিরিয়াসলি পড়তেন যে আমিই মাঝেমধ্যে অস্বস্তিতে পড়ে যেতাম। আমি তা-ও মাঝেমধ্যে একটু হালকা চালে পড়তাম। কিন্তু বাবা? এক মুহূর্তও ঢিলে দেননি। তাই বাবার নেট উত্তীর্ণ হওয়াটা আমার কাছে চমক নয়। বরং বাবার সঙ্গে আমিও উত্তীর্ণ হয়েছি, সেটাই বলতে পারেন আমার কাছে চমক।’
আব্দুল গণির বড় মেয়ে শাদাব কিছু দিন আগে এ দেশে চাকরি ছেড়ে সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে গিয়েছেন। তাঁর সাবজেক্ট এআই ও বিগ ডেটা। গুগলের সেই প্রজেক্টে তিনি কর্মরতও। আর নিউ টাউনের আবাসনের ফ্ল্যাটে তাঁর বাবা আর ছোট বোন এখন জোরকদমে পড়াশোনা করছেন। পিএইচডি-র ক্লাস শুরুর আগে যতটা এগিয়ে থাকা যায় আর কী।