উল্লেখ্য, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন, বুধবার সকালে নদিয়া জেলা স্টেডিয়ামের পাঁচিলের ধারে দুর্গাপুজোর ফাঁকা মণ্ডপে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর আধপোড়া দেহ উদ্ধার হয়। মায়ের দাবি, লক্ষ্মীপুজোর বাজার করতে বেরিয়েছিলেন মেয়ে। বেরিয়ে ফোন করে জানিয়েছিলেন, ওই যুবকের (প্রেমিক) সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে রেস্তরাঁয় খেতে যাচ্ছেন। কিন্তু আর বাড়ি ফেরেননি মেয়ে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন রাতে অভিযুক্তের সঙ্গে ওই তরুণীর একাধিক বার ফোনে কথাবার্তা হয়। অভিযুক্ত এবং মৃতা তাঁর পরিচিত ছিলেন বলে স্বীকার করলেও ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন ওই তরুণী। পুলিশের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত মঙ্গলবার রাত ১০টা ৪৫ থেকে ১১টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত অভিযুক্তের সঙ্গে কার কার কথা হয়েছে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকেই ওই তরুণীর খোঁজ মেলে।
শুক্রবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। তরুণীকে দীর্ঘ ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুই আধিকারিক। সেখানে তরুণী জানিয়েছেন, ঘটনার রাতে তাঁর সঙ্গে ছাত্রীর কথা হয়েছিল। পরের দিন তাঁকে বাড়িতে নিমন্ত্রণও করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত এবং মৃতার সঙ্গে আমার মাত্র এক দিনের আলাপ ছিল। দুর্গাপূজার কার্নিভালে আমার সঙ্গে প্রথমে পরিচয় হয় ওই তরুণীর। ওঁর প্রেমিকের সঙ্গে আমার আলাপ সেই সূত্রেই। কার্নিভালের দিন কদমতলা ঘাটে তরুণীকে নিতে এসেছিলেন তাঁর প্রেমিক। সেখানেই কথাবার্তা বলেছিলাম।’’ সেই তরুণীই আবার জানাচ্ছেন, গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রীর হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাস দেখে সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনশট নিয়েছিলেন তিনি। তার পর সেটা তাঁর প্রেমিককে পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিলেন কী হয়েছে। কিন্তু ‘বান্ধবী’কে কেন ফোন করেননি? তরুণীর দাবি, ‘‘আমি তিন-চার বার ফোন করেছিলাম। কিন্তু ফোন তোলেনি। তাই স্টেটাসের স্ক্রিনশট নিয়ে ওর প্রেমিককে পাঠাই।’’ তাতে কী প্রতিক্রিয়া ছিল মৃতার প্রেমিকের? তরুণীর কথায়, ‘‘আমি অভিযুক্ত যুবককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘এ সব কী চলছে? তুই কী করেছিস ওর সঙ্গে?’ তখন অভিযুক্ত জবাবে বলে, ‘এ সব নিয়ে ভাবিস না। ও মাঝেমধ্যেই এ রকম করে। আগামিকাল সকালে ওকে ফোন করে নিস।’’’ অভিযুক্ত যুবক কি তরুণীকে কোনও টাকা ধার দিয়েছিলেন? তদন্তকারীদের ওই প্রশ্নের জবাবে তরুণী বলেছেন, ‘‘৫০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিল ছেলেটি। সেই টাকা ফেরত পায়নি।’’ কিন্তু এক দিনের পরিচয়ে কী ভাবে যুগলের কাছ থেকে এই তথ্যও পেয়ে গেলেন তিনি?
আনন্দবাজার অনলাইন ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, ‘‘এই কেসের সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমার যতটুকু জানা ছিল, তা জানিয়েছি। আমার মোবাইল থেকে পেনড্রাইভে সমস্ত তথ্য নিয়েছেন তদন্তকারীরা। এর বেশি আর কিচ্ছু জানি না।’’
তবে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই তরুণীর বয়ান ভাবাচ্ছে তাদের। এক, সত্যি যদি তিন জনের এক দিনের পরিচয় হয়, তবে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য কী ভাবে জানতে পারলেন তিনি? দুই, সদ্য পরিচয় হওয়া কোনও ব্যক্তির হোয়াট্সঅ্যাপ সংক্রান্ত স্ট্যাটাস নিয়ে এতটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন কেন তিনি? তিন, কোন সূত্রে অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে তরুণীর পরিচয় হয়েছিল? চার, কী ভাবে কৃষ্ণনগরে দুর্গাপুজোর কার্নিভালের তাঁদের আলাপ হয়েছিল? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ধৃত যুবক এবং ওই তরুণীকে সামনাসামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। দু’জনের কাছ থেকে পাওয়া বয়ানের ভিত্তিতে আবার তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হতে পারে।