পুজোর ছুটির আগে ওই শিক্ষাঙ্গনের চার নম্বর গেটের সামনে এবং ফেটসু-র ইউনিয়ন-কক্ষে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনা যাদবপুরের পরিবেশ, পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কেত বলেই মনে করছেন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বড় অংশ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত মাসে নাক-এর পরিদর্শনের আগেই শিক্ষাঙ্গনের এমন দশা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরে এসেছিল। তখনই অনেকের চোখে পড়ে, যাদবপুরের আশীর্বাদ ক্যান্টিনের পাশ থেকে শুরু হওয়া বিস্তীর্ণ খেলার মাঠ সন্ধ্যার অন্ধকারে নেশার মজলিসের আখড়া হয়ে উঠছে। সেই সময়েই পরিকল্পনা করা হয়, কী ভাবে তা বন্ধ করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “সম্প্রতি মেন হস্টেল সংস্কারে রাজ্য সরকার সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা দিলেও যাদবপুরের পরিকাঠামোর উন্নয়নে অর্থাভাব একটা বড় সমস্যা। যাদবপুরে নৈরাজ্যের বিক্ষিপ্ত পরিস্থিতির সঙ্গে পরিকাঠামোগত খামতিও জড়িয়ে। যেমন, খেলার মাঠে অন্ধকারের সুযোগও কেউ কেউ নিত! সুযোগ বুঝে মাঠে মদ বা মাদকের আড্ডা বসত।”
এই অবস্থায় শিক্ষকদের একাংশই উদ্যোগী হয়ে আলোর সংস্থান করান। যাদবপুরের সল্টলেক ক্যাম্পাসের মাঠে সিএবি-র ক্রিকেট হয়। সিএবি-র মাধ্যমেই যাদবপুরের শিক্ষাঙ্গনেও খেলার মাঠে আলোর বন্দোবস্ত করা হয়। কিন্তু এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বেশ কয়েকটি মার্কা-মারা অঞ্চল রয়েছে, যেখানে সন্ধ্যার পরে নিরাপত্তাকর্মীরাও বিচলিত বোধ করেন। যাদবপুরের সংশ্লিষ্ট এক কর্তা বলছেন, “ওএটি বা ওপেন এয়ার থিয়েটার প্রাঙ্গণ, দর্শন ভবন, পিছনেই নজরুল ভবন, অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিল্ডিংয়ের কিছু কোণে রাতে আকছার নেশার আড্ডা বসে। রাতের দিকে মিলনদার ক্যান্টিনের উল্টো দিকে সুবর্ণজয়ন্তী ভবনের সিঁড়ি বা যাদবপুরের ঝিলের ধারের পরিবেশও সব সময়ে স্বাস্থ্যকর থাকে না।”
ওই শিক্ষকের কথায়, “ছাত্রেরা অনেকেই প্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু সব সময়ে বা সব ধরনের আড্ডায় তাঁদের আচরণ পরিণত বা প্রাপ্তবয়স্ক সুলভ বলা যাচ্ছে না। নিরাপত্তারক্ষীদের বলা হয়েছিল, রাত আটটার পরে বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। নানা আড্ডায় ছাত্রদের দেখে তাঁরাও পিছু হটছেন।”
নেশার আড্ডা থেকে যাদবপুরের ভিতরে খুচখাচ গোলমাল বাধার কথা মানছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের একাংশও। জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “সেপ্টেম্বরে যাদবপুরের ক্যাম্পাসের সান্ধ্য পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ আসা বাড়ছিল। আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি।”
এর মধ্যেই যাদবপুরের কর্মী আবাসনের বাসিন্দাদের একাংশের সঙ্গে ছাত্রদের একাংশের হাতাহাতির কিছু ঘটনা ঘটে। এমন একটি ঘটনা থেকে রাগ পুষে রেখেই কর্মী আবাসনের বাসিন্দা, যাদবপুরের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে ছক কষে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ছাত্রের অভিযোগ, “আমাকে খুঁজে মারধর করার জন্য দুর্বৃত্তেরা তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে ক্লাসের আশপাশেও হাজির হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উঁচু ক্লাসের কয়েক জন ছাত্রের হুমকিতে ঠিকঠাক ক্লাস করতেও আমার সমস্যা হচ্ছিল।”
জুটা-র সদস্যদের একাংশের মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না-থাকলে যাদবপুরে ফের বড় মাপের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অতএব, কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না-হলে শেষ পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই মুখ পুড়বে, যা কোনও মতেই কাঙ্ক্ষিত নয়।