তরাই ও ডুয়ার্সের চা-শিল্পের সঙ্কট এ বার দার্জিলিংয়েও ছায়া ফেলবে কি না সেই প্রশ্নে উদ্বিগ্ন পাহাড়। বোনাস ইস্যুতে এ বার পাহাড়ে লঙভিউ চা বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রিঙটঙ চা বাগানে অশান্তি চলছে। শনিবার সোম চা বাগানে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কস-এর নোটিস জারি করা হয়েছে। প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার পক্ষ থেকে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক চেয়ে শ্রম দপ্তরে আর্জি জানানো হয়েছে।গত কয়েক বছরে পানিঘাটা, ধোতরে, রঙমুক, মুন্ডাকোঠি, আম্বুটিয়া, চঙথঙ, নাগরি, পান্ডাম, পেশক এবং সিংতাম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধ চা বাগানের তালিকায় এ বার আরও তিনটি চা বাগানের নাম ঢুকে পড়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে। পাতা তোলার মরশুম শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন চা বাগানে নতুন করে আর আয়ের সংস্থান নেই। আবার মার্চ মাস থেকে চা পাতা তোলা শুরু হবে। ফলে চার মাসের বেতনের টাকা বাঁচাতে মালিকপক্ষ চা বাগান বন্ধ করে দিলে শ্রমিকেরাই বিপাকে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চা বাগান মালিক সমিতির বক্তব্য, চলতি বছরে যে খরা পরিস্থিতির মুখে চা শিল্পকে পড়তে হয়েছিল সেটা শ্রমিকদের বোঝা দরকার। দার্জিলিং টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘বোনাস সব সময়েই লাভের উপরে নির্ভর করে। এ বার পরিস্থিতি অন্যরকম। সেটা সবার বোঝা দরকার।’
তরাই ও ডুয়ার্সে এ বার পুজো বোনাস ১৬ শতাংশ স্থির হলেও পাহাড়ের শ্রমিক সংগঠনগুলি ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে অনড় থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার ১৬ শতাংশ বোনাস চূড়ান্ত করে দিলেও শ্রমিকেরা মানতে রাজি নন। যদিও মালিকপক্ষ ইতিমধ্যেই ১৬ শতাংশ হারে বোনাস দিয়েছেন। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি মেনে শ্রম দপ্তর বোনাস চূড়ান্ত করার জন্য ফের বৈঠক ডেকেছে। ফলে বিরোধ এবং অশান্তি পুরোপুরি ভাবে মেটেনি।
শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের নেতা তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক বলেন, ‘তরাই ও ডুয়ার্সের সঙ্গে পাহাড়ের পরিস্থিতি মেলানোর যে চেষ্টা চলছে, তাতেই আমাদের ঘোর আপত্তি। পাহাড়ের চায়ের দাম, খরা পরিস্থিতির সঙ্গে তরাই ও ডুয়ার্সের মিল নেই। কুড়ি শতাংশ বোনাস কেন দেবেন না মালিকেরা।’ পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলিও। দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ত কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি।
দার্জিলিংয়ের সাংসদ বলেন, ‘শ্রমিকেরা ন্যায্য বোনাস পাবেন না। বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকেরা পুজো অনুদান পাবেন না, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ পাহাড়ের দশটি বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকেরা এখনও পুজো অনুদান পাননি। তা নিয়েও ক্ষোভ বিস্তর। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা নির্জল দে মনে করেন, ‘বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ করতে হবে সবাইকে।’