স্টাফ রিপোর্টার : বিরোধীদের তরফে যতই পরিকল্পিত কুৎসা এবং অপপ্রচার হোক না কেন, ২০২৬ সালে কমপক্ষে ২৫০ আসন নিয়ে বাংলায় চতুর্থবার সরকার গড়বেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর যে সিপিএম মুখে যতই বলুক না কেন, তাদের ভোট ব্যাঙ্ক গেরুয়া শিবির থেকে ফিরছে, বাস্তবে তারা নির্বাচনী ফলে তৃতীয় হবেই হবে। দলের বিজয়া সম্মিলনীতে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম ১নং ব্লকের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তথ্য দিয়ে শনিবার এমনই দাবি করেছেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন, আছেন, থাকবেনও। কারণ একের পর এক সামাজিক প্রকল্প এবং বাংলাকে বিশ্ব দরবারে সম্মানের শিখরে পৌঁছে দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। ২০১১ ও ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পর ২০২১-এর নির্বাচনেও দেখেছেন প্রতিবার আসন বেড়েছে তৃণমূলের। এবারও আমরা হলফ করে বলছি, আমরা তৃণমূল কর্মীরা সকলে যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তবে ২০২৬-এর ভোটেও ২৫০ আসনের নিচে জোড়াফুলকে নামানোর সাধ্য অন্য কোনও শক্তির নেই।’’ উল্লেখ্য, ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকায় তৃণমূল ১৮৪, ২০১৬ সালে ২১১ এবং ২০২১ সালে ২১৩টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। পরে উপনির্বাচনে আরও অনেকগুলি বিধানসভার আসনে জিতেছিল তৃণমূল। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালে তৃণমূল এককভাবে ৪৫.০৬ শতাংশ ভোট পেলেও ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ৪৭.৯৪ শতাংশ। যদিও ২০১৬ ও ২০২১-এ দু’বারই একদিকে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ এবং অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস প্রবল কুৎসার পাশাপাশি গোপনে বোঝাপড়া করেও তৃণমূলের ভোট এবং আসন কমাতে পারেনি বলে জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাম জমানায় জমি আন্দোলনের অন্যতম গর্ভগৃহ নন্দীগ্রামের ব্রজমোহন তিয়ারী শিক্ষানিকেতনের মাঠে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকে বিশাল জমায়েতে বিজয়া সম্মিলনী হয়। প্রধান বক্তা ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। উৎসবের প্রথম দফা শেষ হতেই তৃণমূল যে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রচারে কার্যত নেমে পড়ল, তা এদিন কুণালের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি মূলত তিন দফা গাইডলাইন জানিয়ে দেন। বলেন– ১) মমতা বন্দে্যাপাধ্যায়ের সরকারের যে ৭২টি সামাজিক প্রকল্প রয়েছে, তা আবার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে সমস্ত ভোটারকে ভালো করে বুঝিয়ে বলতে হবে। যাঁরা এখনও মা-মাটি-মানুষ সরকারের নানা পরিষেবা ও প্রকল্পের আওতায় আসেননি, তাঁদের নিয়ে আসতে হবে। ২) কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে বাংলাকে লাগাতার বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছে তা মানুষকে তথ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের যে বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল, সেই আবাস প্রকল্প এবং ১০০ দিনের টাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিচ্ছেন, তাও সাধারণ মানুষকে ধীরস্থিরভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। ৩) খুন-ধর্ষণের মতো বিচ্ছিন্ন সামাজিক ব্যাধি রুখতে রাজ্য সরকার অপরাজিতা বিল পাস করানোর মতো নানা ধরনের কড়া ব্যবস্থা যে নিচ্ছে, তা প্রতিটি ভোটারকে জানাতে হবে। নাম না করে আর জি করের ঘটনা উল্লেখ করে কুণাল বলেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাধীদের ফাঁসি চেয়ে আসছেন, কিন্তু বিরোধীরা শুধুমাত্র রাজনীতির স্বার্থে সোশাল মিডিয়ায় ফেক নিউজ ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের কর্মীদের উদ্দেশে এদিন কুণাল লোকসভা ভোটে জেলার নির্বাচনী তথ্য তুলে ধরে আত্মসমালোচনায় সরব হন। বলেন, ‘‘জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে ১৫টিতেই কেন আমরা হেরে গেলাম, তা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আত্মসমালোচনা করতে হবে। উন্নয়নকে মানুষ সমর্থন করলেও শুধুমাত্র নিজেদের বিবাদে আমরা যে হেরে যাচ্ছি, তা চিহ্নিত করে আসন্ন নির্বাচনে জিততে হবে। এবার ১৫টিতে জিতে লোকসভা ভোটে পরাজয়ের গ্লানি দূর করতে হবে। নন্দীগ্রাম ১নং ব্লক যদি জিততে পারে, তবে অন্য ব্লকগুলি কেন পারবে না?’’
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের বিষয় উত্থাপন করে এদিন কুণাল বলেন, ‘‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১৯৮৩ সালে জ্যোতি বসু কীভাবে পুলিশ দিয়ে লাঠি চালিয়ে আর জি করে ধরনায় বসা জুনিয়র ডাক্তারদের তুলে দিয়েছিলেন সে কথা বলতে হবে। বাম-অতিবাম যৌথভাবে যে কুৎসা ও অপপ্রচার করছে, তার জবাব দিতে হবে।’’ এর পরই কুণাল বলেন, ‘‘জেলায় জেলায় মুখ্যমন্ত্রী প্রচুর নতুন হাসপাতাল করেছেন, সেখানে অনেক ডাক্তারকে পোস্টিং দিয়েছেন। খবর আসছে, একাংশের ডাক্তার সপ্তাহে সাতদিন ডিউটি করে গরিব রোগীদের পরিষেবা দিচ্ছেন। আর কিছু ফাঁকিবাজ ডাক্তার কোনওক্রমে দু’দিন ডিউটি করে পালিয়ে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করছেন। গ্রামের হাসপাতালে কাজ করা এই মানবিক চিকিৎসকদের যেমন আগলে রাখুন, তেমনি ফাঁকিবাজ ডাক্তারদের তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য প্রশাসনে জমা দিন।’’ সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী, জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মাইতি, সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সহ-সভাপতি শেখ সুফিয়ান, জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি সুহাসিনী কর, ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ প্রমুখ।