খুনের আগে প্রেমিকের বন্ধুকে জড়িয়ে প্রেমের ‘মিষ্টি’ অভিনয়!
এই সময় | ২০ অক্টোবর ২০২৪
পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার: ময়নাতদন্তে খুনের প্রমাণ মেলায় নিহত আনন্দ কুণ্ডুর বন্ধু লিটন পালকেই সন্দেহ করেছিল পুলিশ। কারণ ছোট থেকে আনন্দ ও লিটন আলিপুরদুয়ারে একই স্কুলে পড়ে বড় হয়েছে। হরিহর আত্মা। দশমীর রাতে সেই প্রাণের বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি আনন্দ।পরের দিন তাঁর মৃতদেহ মেলে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে। লিটন পলাতক থাকলেও তদন্তে নেমে পুলিশ তার প্রেমিকা মিষ্টি রাজভরকে গ্রেপ্তার করেছে। নিজেদের হেফাজতে এনে টানা জেরার পরে পুলিশ নিশ্চিত, ওই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড লিটন নয়। বছর একুশের মিষ্টি। তার ব্লু-প্রিন্ট শুনে তাজ্জব পুলিশ কর্তারাও। জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী বলেন, ‘আগে আমরা লিটনকে সন্দেহ করেছিলাম। কিন্তু তার সঙ্গী তরুণীই খুনের মোটিভেটর। রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়।’
কী কারণে খুনের চক্রান্ত? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লিটনের সঙ্গে মিষ্টির প্রেমের সম্পর্ক আছে জানা সত্ত্বেও সাদাসিধে আনন্দ কখনও ফোনে, কখনও হোয়াটসঅ্যাপে বা এসএমএসে তাকে প্রেম নিবেদন করত। দিনের মধ্যে ৪০-৫০ বার ফোন-মেসেজের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল তরুণী। আনন্দকে থামাতে লিটনের উপরে চাপ সৃষ্টি করলেও কাজে আসেনি। প্রাণের বন্ধু হওয়ার খানিকটা গোবেচারা আনন্দের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারেনি।
লিটনের অবহেলায় বিরক্ত হয়ে নিজেই টাইট করার ফন্দি আঁটে মিষ্টি। আনন্দকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে বলে অভিযোগ। ঠিক হয় যে দশমীর রাতে মদের আসরে অভিনয় করে লিটনের সামনেই আনন্দকে জড়িয়ে ধরবে সে। এরপরে সবাইকে জানিয়ে দেবে, ‘লিটন নয়, আনন্দই তার ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী।’ আসর জমে উঠলে মদ খাইয়ে বেহেড করে রাস্তায় ফেলে দেবে। পরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার গল্প ছড়িয়ে দেবে।
প্ল্যান অনুযায়ী রবিবার দশমীর রাতে দু’টি বাইকে চেপে মোট ছ’জন আলিপুরদুয়ারে ৩১/সি জাতীয় সড়কের একটি ধাবাতে যায়। লিটনের চালানো বাইকের মাঝে আনন্দকে বসিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল মিষ্টি। যাতে আনন্দের মনে কোনও সন্দেহ না আসে। এরপর ধাবায় শুরু হয় দেদার মদ্যপান। এক সময়ে আনন্দ নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারালে, অপারেশনের ইঙ্গিত দেয় সে। ফেরার সময়ে একই ভাবে লিটনের বাইকের মাঝে বসানো হয় আনন্দকে, পিছনে বসে মিষ্টি।
দলের অপর তিন সঙ্গী লিটনকে বাইক নিয়ে অনুসরণ করতে শুরু করে। ৩১/সি জাতীয় সড়ক ছেড়ে দমনপুরে নির্জন জায়গায় এসে নেশায় বুঁদ আনন্দকে চলন্ত বাইক থেকে ঠেলে রাস্তায় ফেলে দেয়। কিছুদূর চলে যাওয়ার পরে নেশার ঝোঁকে সবাই আবার ঘটনাস্থলে ফিরে আসে। এরপর আনন্দকে পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করার চেষ্টা করে। রাস্তায় গড়িয়ে পড়া রক্ত নিজেদের গায়ে মেখে আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে জংশন হাসপাতালে যায় তারা।
সেখানে চিকিৎসককে বাইক দুর্ঘটনার গল্প বলে আনন্দকে ভর্তি করে। পরিচয় গোপন করে নিজেরাও প্রাথমিক চিকিৎসা করে। আনন্দের অবস্থা সঙ্কটজনক দেখে তাঁকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সেই মতো তারপর পরিচয় ভাঁড়িয়ে ওই দলের প্রত্যেকে আনন্দকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
খুনে সহযোগিতা করার অপরাধে লিটনের এক সাগরেদকে শনিবার কালচিনি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে লিটন এখনও অধরা।