• গ্রামে কেউ মদ বিক্রি করলে জরিমানা নেবেন মহিলাদের
    বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: মদের বিরুদ্ধে এবার নিষেধাজ্ঞা জারি করল আস্ত একটা গ্রাম। গ্রামে শুধু মদ বিক্রিই নয়, মদ খেয়ে যদি কেউ অশান্তি পাকায়, স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে, তাহলে মারধরের পাশাপাশি জরিমানা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে গ্রামের মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে। এনিয়ে পোস্টারও লাগানো হয়েছে গ্রামজুড়ে। পুরুলিয়া জেলার কোটশিলা থানার অন্তর্গত দুয়ারসিনি গ্রামের এহেন পোস্টারকে ঘিরে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। পুরুলিয়া জেলার শেষপ্রান্তে ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া দুয়ারসিনি গ্রামে প্রায় তিনশো পরিবারের বসবাস। বাসিন্দাদের যাঁদের জমি আছে, তাঁদের চাষবাস, বাকিদের দিনমজুরি করে সংসার চলে। মহিলাদের অভিযোগ, গ্রামে শান্তি নেই। চোলাইয়ের ভাটিই তাঁদের শান্তি কেড়ে নিয়েছে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গ্রামে একাধিক চোলাইয়ের ভাটি রয়েছে। সারাদিন সেইসব ভাটিতেই পড়ে থাকে গ্রামের বহু পুরুষ। চোলাইয়ের নেশায় সারাদিন বুঁদ হয়ে রাতে বাড়িতে এসে শুরু হয় মহিলাদের উপর অত্যাচার। পাশে ছোট ছেলেমেয়ে থাকলেও বিশেষ রেয়াত করে না। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ থেকে শুরু করে স্বামীর হাতে লাথি ঝাঁটা খাওয়া গৃহবধূদের রোজকারের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মদের নেশায় বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যেও ঝামেলা, মারপিটে জড়িয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে গ্রামে বসে জুয়ার আসরও। সারাদিনের আয় মদ আর জুয়ার পিছনেই উড়ে যাচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দা ফুলু মাহাত, অষ্টমী মাহাত, সবিতা মাহাত বলেন, দিনমজুরি করে যা আয় হয়, গ্রামের পুরুষেরা সেই টাকা নিয়ে গিয়ে মদ খেয়ে, জুয়া খেলে বাড়ি ফেরে। প্রতিবাদ করলে অশান্তি হয়। আশুতোষ মাহাত, ষষ্ঠী মাহাত, মানিরাম মণ্ডলরা বলেন, গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেউ লেখাপড়া করছে না। বড়রা দিনরাত মদ খেয়ে অশান্তি করলে ছোটরা কী শিখবে? কমবয়সি ছেলেরাও মদ খেতে শুরু করেছিল। বড়রা বারণ করলেও শুনছে না। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তাঁরা মদের ভাটি বন্ধ করার জন্য আগেও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাভ না হওয়ায় এবার আরও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। দিন কয়েক আগে গ্রামে এনিয়ে পোস্টারও লাগানো হয়। তাতে স্পষ্ট লেখা, গ্রামে মদ বিক্রি ও জুয়া খেলা নিষিদ্ধ। মদ খাওয়াও বন্ধ। এমনকী কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতেও মদ খাওয়া নিষিদ্ধ। ধরা পড়লে তাকে মারধর করে জরিমানা করা হবে। তারপর পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হবে।  এনিয়ে শনিবার কোটশিলা থানাতে ডেপুটেশনও দেন বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের দাবি, চোলাই ভাটিগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। গ্রামে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দিক। থানার আধিকারিকদের তরফে বাসিন্দাদের আশ্বস্তও করা হয়েছে। এক আধিকারিক বলেন, এধরনের ঘটনা কখনওই আমরা বরদাস্ত করব না। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)