• বাজার দখল করেছে বৈদ্যুতিক আলো, প্রদীপ তৈরির ব্যস্ততা নেই পালপাড়ায়
    বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, করিমপুর: দীপাবলির আলো জ্বালাতে একসময় মাটির প্রদীপ ও মোমবাতিই মূল ভরসা ছিল। সেই মাটির প্রদীপের চাহিদা মেটাতে কালীপুজোর আগে প্রদীপ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু এখন মাটির প্রদীপ, মোমবাতির জায়গা নিয়েছে হাজারো বৈদ্যুতিক আলোকমালা। ফলে প্রদীপের চাহিদা কমে যাওয়ায় পালপাড়ায় আর আগের মতো ব্যস্ততা নেই।


    করিমপুরের মৃৎশিল্পী অরুণ পাল বলেন, আগে দুর্গাপুজো শেষ হতেই এলাকার বিভিন্ন পালপাড়ায় মাটির প্রদীপ তৈরির কাজ চলত। মৃৎশিল্পীদের কারও কাছে পাঁচ হাজার, আবার কারও কাছে ১০হাজার প্রদীপের বায়না আসত। সকাল থেকে সারাদিন মাটির প্রদীপ তৈরির কাজ চলত। প্রদীপ তৈরি করে বাড়ির মহিলা ও ছোটরা উঠানে বা ছাদে রোদে শুকিয়ে ঘরে তুলত। শুকানোর পর পুড়িয়ে সেই প্রদীপ বিভিন্ন জেলার বাজারে পাঠানো  হতো। কিন্তু এখন মাটির প্রদীপের চাহিদা কমে গিয়েছে। তাই অনেকেই প্রদীপ তৈরি ছেড়ে অন্য কাজ করছেন। অরুণবাবু এবার ১০হাজারের জায়গায় প্রায় তিন হাজার মাটির প্রদীপ তৈরি করেছেন।


    অপর মৃৎশিল্পী সুকুমার পাল বলেন, আগে মাটি ও জ্বালানি প্রায় বিনামূল্যে পাওয়া যেত।  কিন্তু এখন সবকিছু টাকা দিয়ে কিনতে হয়। সেকারণে মাটির জিনিসের দামও বেড়ে গিয়েছে। সেই তুলনায় বাজারের বৈদ্যুতিক আলো সস্তায় বিকচ্ছে। ফলে আমরা সমস্যায় পড়ছি। করিমপুরের স্কুলশিক্ষক সুপ্রকাশ প্রামাণিক বলেন, ছোটবেলায় প্রতি বছর কালীপুজোর আগে মাটির প্রদীপ কিনতে বাজারে যেতাম। কালীপুজোর সন্ধ্যায় বাড়ির ছাদে সেসব প্রদীপ জ্বালানো হতো। মোমবাতিও জ্বালানো হতো। কিন্তু এখন সেই দিন নেই। বিশেষত প্রদীপ বা মোমবাতির মতো দেখতে বৈদ্যুতিক আলো খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে। 


    এই বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহারের অনেক সুবিধাও আছে। মাটির প্রদীপ বা মোমবাতি একবার ব্যবহারের পর আর ব্যবহার করা যেত না। কিন্তু বৈদ্যুতিক আলো কয়েকবছর ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া আগে শহরে বিদ্যুৎ থাকলেও গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ-সংযোগ ছিল না। এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও প্রতিটি বাড়িতেই বিদ্যুৎ-সংযোগ আছে। ফলে সবাই বৈদ্যুতিক আলোকমালার দিকে ঝুঁকেছেন।


    করিমপুরের এক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিক্রেতা জানান, বাজারে কম দামে নানা ধরনের চাইনিজ আলোকমালা বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা সেই আলোই বেশি কিনছেন। ফলে মাটির প্রদীপের চাহিদা কমছে।   নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)