নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: হলংয়ের ঘটনার জের। দুর্ঘটনা এড়াতে গোরুমারার বনবাংলোগুলিতে এবার সৌরবিদ্যুতের ভাবনা দপ্তরের। এ ব্যাপারে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হল রাজ্যে। অর্থদপ্তরের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বনকর্তারা। যদি সৌরবিদ্যুতের প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী বনবাংলোগুলিতে বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর উন্নয়নে কী কী করা প্রয়োজন, তার জন্য কত খরচ হবে, তারও প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হয়েছে রাজ্যের কাছে। পিডব্লুডির (ইলেকট্রিক্যাল) এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সরেজমিনে ঘুরে দেখে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেছেন। সেইমতো তৈরি হয়েছে প্রকল্প রিপোর্ট। পাশাপাশি গোরুমারার ঐতিহ্যবাহী কাঠের বনবাংলোগুলিতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে ইতিমধ্যেই ফায়ার অডিটও সেরে ফেলেছে বনদপ্তর। সেই অডিটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা হিসেবে বনবাংলোগুলিতে বর্তমানে যে পরিকাঠামো রয়েছে, তার সঙ্গে বাড়তি কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। সবটাই রাজ্যকে জানিয়ে দিয়েছেন বনদপ্তরের কর্তারা।
গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের সহকারী বনাধিকারিক রাজীব দে বলেন, আমাদের তরফে সবটাই করে ফাইল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যে। অর্থদপ্তরের তরফে অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি হলংয়ের ঘটনা ঘটেছে। গোরুমারার বনবাংলোগুলিতেও অনেকটা অংশজুড়ে কাঠ রয়েছে। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি এড়াতে আমরা সৌরবিদ্যুতের প্রকল্পও তৈরি করেছি। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক লাইনের সুরক্ষার জন্য কী কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে পিডব্লুডির (ইলেকট্রিক্যাল) সুপারিশ নেওয়া হয়েছে। ফায়ার অডিটও হয়েছে। অনুমোদন মিললেই এবার আমরা কাজ শুরু করে দেব।
ধূপঝোরা গাছবাড়ি, মৌচুকি বনবাংলো, কালীপুর কটেজ, চালসার পানঝোরা ওয়াইল্ডনেস নেচার ক্যাম্প, মূর্তি বনবাংলো, লাটাগুড়ির হর্নবিল নেস্ট ও রামসাইয়ের রাইনো ক্যাম্প, গোরুমারায় এই সাতটি বনবাংলো রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বনবাংলো করোনার সময় থেকেই কার্যত বন্ধ। গত জুনে হলংয়ের ঘটনার পর থেকে এই বাংলোগুলি পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। পুজোর মরশুমেও পর্যটকরা সেখানে রাত্রিবাসের সুযোগ পাননি। এতে পর্যটকদের অনেকেরই মন খারাপ। তাঁদের বক্তব্য, তিনমাস জঙ্গল বন্ধ ছিল। সেসময় বনবাংলোগুলির সুরক্ষার কাজ করা যেত। সেক্ষেত্রে পুজোর সময় যাঁরা গোরুমারায় বেড়াতে এলেন, তাঁরা সেখানে থাকার সুযোগ পেতেন।
বনদপ্তরের অবশ্য বক্তব্য, প্রতিটি বাংলোতেই বেশিরভাগ অংশজুড়ে রয়েছে কাঠ। ফলে হলংয়ের মতো ঘটনা যাতে কোনওভাবেই না ঘটে, সেজন্য এগুলির সুরক্ষায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের কাজ চলছে। একাধিক দপ্তরের কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট পাওয়ার বিষয় রয়েছে। ফলে কিছুটা সময় তো লাগবেই।
ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি দিব্যেন্দু দেব বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর গোরুমারার বনবাংলোগুলিতে থাকার মজাটাই আলাদা। প্রয়োজনীয় সুরক্ষার কাজ সেরে যাতে দ্রুত বনবাংলোগুলি খুলে দেওয়া যায়, বনদপ্তরের সে ব্যাপারে আরও তৎপর হওয়া দরকার। ফাইল চিত্র।