নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিশ্বের ১০ দেশের সেরা ২৫ ক্লাউন শিল্পী এসেছেন শহরে। সায়েন্স সিটি অডিটরিয়ামে চলছে তিনদিনের আন্তর্জাতিক ক্লাউন ফেস্টিভ্যাল। রবিবার তার শেষ দিন। শহরের বুকে এই প্রথম এরকম কোনও উৎসব হচ্ছে। ফলে কলকাতায় এখন হাসির ফোয়ারা। লাল মুখো, নাকে বল, রংচঙে জোব্বায় ঢাকা মজার মানুষগুলিকে দেখে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে শিশুরা। বড়দেরও পেটে খিল।
এক চাকার সাইকেলে হু হু করে এগিয়ে চলেছেন হলুদ জ্যাকেট, লাল প্যান্ট, মাথায় টুপি আর নাকে বল গোঁজা ক্লাউন। অবিশ্বাস্য তাঁর শারীরিক সক্ষমতা। সাইকেল ছেড়ে মাঝে মধ্যে মঞ্চে রাখা কাঠামো বেয়ে অবলীলায় উঠে পড়ছেন উপরে। ঢুকলেন পেট মোটা অন্য এক জোকার। অনর্গল মজার কথা বলছেন। হেসে কুটোপাটি সবাই। মঞ্চজুড়ে তখন রঙিন আলো খেলছে, তাল দিচ্ছে ছন্দ মেলানো মিউজিক। লাগাতার মজায় বাচ্চাগুলির মাথা খারাপ হওয়ার উপক্রম। কারওর কথায় কান না দিয়ে সিট ছেড়ে পৌঁছে গেল মঞ্চের সামনে। চোখ গোল গোল। হেসে গড়িয়ে পড়ছে। শিল্পী মঞ্চে ডেকে নিলেন। রূপকথার ক্লাউনদের সঙ্গে খেলাধুলোও হল খুদেদের। সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়াম তখন যেন স্বপ্নরাজ্য। ছোট্ট আলোলিকা চট্টোপাধ্যায় বলল, ‘ক্লাউনের সঙ্গে খেললাম আমি। ও খুব কিউট!’
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্লাউন এবং বিশ্ব ক্লাউন ফেডারেশনের প্রাক্তন সহ সভাপতি মার্টিন ফ্লাবার ডি’সুজার তত্ত্বাবধানে চলছে এই ফেস্টিভ্যাল। যোগদানকারী ২৫ শিল্পীর মধ্যে ১০ জন মহিলা। ভারতের পাশাপাশি ফ্রান্স, ব্রাজিল, জার্মানি, রাশিয়া, স্পেন, ইতালি, আমেরিকা, আর্জেন্তিনা সহ কয়েকটি দেশ থেকে এসেছেন শিল্পীরা। সাইক্লিং, জাগলিং, কমেডি সব আছে চোখ ধাঁধানো এই ক্লাউন শোতে। মার্টিন ফ্লাবার বললেন, ‘ক্লাউনিং শুধুমাত্র মেকআপ নয়। এটা একটি শিল্পমাধ্যম। যা ফুটিয়ে তুলতে অধ্যাবসায়, দক্ষতা লাগে। কলকাতার অসাধারণ দর্শকদের সামনে অসাধারণ লাগছে।’ শহরে ক্লাউন ফেস্টিভ্যাল নিয়ে এসেছে ই ৩৬৫ সংস্থা। কলকাতায় একাধিক নামকরা শো অর্গানাইজ করে তারা ইতিমধ্যেই বেশ নাম কুড়িয়েছে। সংস্থার কর্ণধার কিঞ্জল ভট্টাচার্য বললেন, ‘এই ফেস্টিভ্যাল শুধু বিনোদনের জন্য নয়। কলকাতার মানুষের জন্য এক আনন্দের স্মৃতি ছেড়ে যাওয়া।’ আজও রয়েছে তিনটি শো। সকাল ১১টা, দুপুর তিনটে আর সন্ধ্যা সাতটায়। টিকিট অনলাইনে। তবে শো কিন্তু শুক্রবার থেকেই হাউসফুল।
তখন প্রথমার্ধের শো শেষ হয়েছে। মিনিট দশেকের বিরতি। কিন্তু লেক গার্ডেন্সের রৌণক দাস হাঁ করে তাকিয়ে মঞ্চের দিকে। ওর ঘোর কাটছে না। মা বললেন, ‘জল খাবে?’ কিন্তু রৌণক দিল কান্না জুড়ে। জিজ্ঞাসা, ‘ম্যাজিক শেষ হয়ে গেল?’ মা তাকে বোঝালেন, ‘টেন মিনিটস বাদে আবার শুরু হবে।’ একটু শান্ত হল ও। কিন্তু শো শেষ হয়ে যাওয়ার পর কিছুতেই বাড়ি ফিরবে না। আবার দেখবে। চিকেন বার্গার দিয়ে অবশেষে কান্না থামানো গেল রৌণকের। গোটা সায়েন্স সিটি তখন যেন রৌণকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধুয়ো তুলছে, ‘আবার দেখব।’