সারদা, নারদ থেকে শুরু করে নিয়োগ ও খাদ্য দুর্নীতির মতো সব মামলাতেই সিবিআইকে শাসক বিজেপির ‘অস্ত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করে গিয়েছে তৃণমূল। আর জি কর-কাণ্ডের তদন্তের ভারও কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে যাওয়ার পরে ‘জবাব দাও সিবিআই’ বলে প্রথমে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিল তারা। কিন্তু সিবিআইয়ের দেওয়া প্রথম চার্জশিটে খুন ও ধর্ষণে একমাত্র সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের নাম থাকায় পুলিশের তদন্তই ‘মান্যতা’ পেয়েছে বলে প্রচারে নেমেছে শাসক দল। তাদের বক্তব্যে সামনে রাখা হচ্ছে সিবিআইয়ের চার্জশিটকেই।
তৃণমূল অবশ্য অবস্থানে বদলের কথা মানতে রাজি নয়। দলের নেতা কুণাল ঘোষের ব্যাখ্যা, ‘‘চিকিৎসকেরা, নিহত ছাত্রীর পরিবার কলকাতা পুলিশের তদন্তে ভরসা রাখতে পারেননি। সরকার বা তৃণমূলও তাতে আপত্তি করেনি। দেখা যাচ্ছে, সিবিআইয়ের তদন্তে পুলিশের থেকে আলাদা কিছু পাওয়া যায়নি। সেই কথাটাই বলতে চাইছি।’’ আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় যে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছিল, তার পক্ষে সওয়ালে সিবিআইয়ের তদন্তকে ‘অস্ত্র’ করছে তৃণমূল। এখনও পর্যন্ত মূল ঘটনায় যে এক জনকে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল, সিবিআই তার বাইরে কিছু করতে পারেনি, এই যুক্তিই খাড়া করেছেন শাসক নেতারা। সমাজমাধ্যমেও দলের আইটি শাখার মাধ্যমে জোরদার প্রচার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, সিবিআই তদন্ত নিয়ে আন্দোলনকারীদের তোলা প্রশ্নকে ঘুরিয়ে দলের পক্ষে ব্যবহার করতে চাইছেন তাঁরা। কুণাল বলেন, ‘‘বিচার আমরা সবাই চাইছি। কিন্তু সেই দাবিতে রাজ্য সরকারের উপরে চাপ তৈরি করতে অবস্থান, অনশনের মতো কর্মসূচি কেন? যদি কোনও খামতি থাকে, তা সিবিআইয়ের। তাই দাবি থাকলে তা কেন্দ্রীয় সরকার বা সিবিআইয়ের কাছে জানানো উচিত।’’ অবস্থান ও অনশনে অবশ্য হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা-সহ ১০ দফা দাবি রাজ্য সরকারের কাছেই। সে সম্পর্কে সরকারের সুরেই রাজ্যের এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘যে ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে, তা রাতারাতি শেষ করা যায় না। সময়ের প্রয়োজন। সরকার তা সম্পূর্ণ করছে।’’
আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরাই শুধু নন, বিচারের দাবিতে যে সব সংগঠন পথে নেমেছে, তারাও সিবিআইয়ের প্রাথমিক চার্জশিট ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে মনে করছে না। পাশাপাশি, তদন্তের গতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ধর্ষণ ও খুনের তদন্তে সিবিআইয়ের ভূমিকায় অসন্তোষ উঠে আসছে। এই অসন্তোষও যুক্তিহীন বলে মনে করছে তৃণমূল। কুণালের প্রশ্ন, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই এই তদন্ত করছে। শুধু তা-ই নয়, মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে চলছে। এই অবস্থায় সিবিআইয়ের তদন্তে আস্থা না-থাকলে তা সুপ্রিম কোর্টে বলা হচ্ছে না কেন?’’