• অতি বিরল অপারেশনে বড় সাফল্য এনআরএসে
    এই সময় | ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়: ডাক্তারি পরিভাষায় বলে, ফিটাস-ইন-ফিটো। অর্থাৎ টুইন বা জোড়া যমজ ভ্রূণ দু’টি আলাদা ভাবে বেড়ে না উঠে একটি শিশুর পেটের ভিতর বেড়ে ওঠে অন্য ভ্রূণটি। এমন ঘটনা এমনিতেই বিরল।

    কিন্তু আরও বিরল একটি নজিরের সাক্ষী রইলেন এবার এনআরএস হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ট্রিপলেট বা তিনটি যমজ ভ্রূণের মধ্যে দু’টিই বেড়ে উঠছিল শিশুর পেটে। ফলে প্রাণসংশয় তৈরি হয়েছিল একরত্তির। রবিবার জটিল এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে ১৮ দিনের নবজাতকের পেটের মধ্যে থেকে অতিবিরল সেই যমজ ভ্রূণকে বের করার সফল জীবনদায়ী অপারেশন করলেন এনআরএসের চিকিৎসকরা। যার নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের জুনিয়র ডাক্তারদের।সারা দুনিয়াতেই ফিটাস-ইন-ফিটো দেখা যায় খুব কম। ৫০ লক্ষ গর্ভধারণ পিছু বড়জোর একটি ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় যেখানে টুইনের একটি ভ্রূণ অন্যটির পেটের মধ্যে থাকে। বিশ্বজোড়া চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে ২০০০টিরও কম সংখ্যক ফিটাস-ইন-ফিটো নথিবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু ট্রিপলেটের দু’টি ভ্রূণ একটি শিশুর পেটে, এমন অতিবিরল নজির কবে কোথায় দেখা গিয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না শিশু-শল্য বিশেষজ্ঞরা। তেমনই একটি সদ্যোজাত কয়েক দিন আগে এনআরএসে রেফার হয়ে আসে মালদা থেকে।

    এ দিন তারই সফল অস্ত্রোপচার হয়। পেডিয়াট্রিক সার্জেন কৌশিক সাহার নেতৃত্বে অস্ত্রোপচারকারী দলে ছিলেন শিশু-শল্য বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিংলাজ সাহা, জুনিয়র কনসাল্ট্যান্ট তনুশ্রী কুণ্ডু এবং অ্যানাস্থেটিস্ট মৌসুমি খাঁড়া। কৌশিকবাবু বলেন, ‘কিছু কিছু যমজ ভ্রূণের ক্ষেত্রে প্রকৃতির কিছু বেনিয়মের ফলে একটি বাচ্চার পেটের মধ্যে অন্য ভ্রূণের অবশিষ্টাংশ ঢুকে যায়। সেখান থেকে রক্ত আহরণ করে বাড়তে থাকে। সেটি পরিপূর্ণ ভ্রূণ নয়। ওটা আংশিক ভ্রূণ। হাত-পা কিছুটা, শিরদাঁড়া কিছুটা, মাথার কিছুটা অংশ থাকে। আরও অদ্ভুত ব্যাপার এই বাচ্চাটির পেটের মধ্যে এই রকম দু’টি ভ্রূণ একসঙ্গে পাওয়া গিয়েছে।’

    প্রবীণ শিশু-শল্য বিশেষজ্ঞ কৌশিকবাবু জানাচ্ছেন, এই নবজাতকের পেটের ভিতরে ভ্রূণ দু’টির মধ্যে আবার হাত পায়ের আঙুলও, তৈরি হয়েছিল যা সাধারণত দেখাই যায় না। তাই প্রায় ২.৫ কেজি ওজনের এই সদ্যোজাত সব অর্থেই অতিবিরল। তার পেটের মধ্যে থাকা ভ্রূণ দু’টিরই মিলিত ওজন প্রায় ৮০০ গ্রাম। এমন নজির তিনি তাঁর লম্বা কেরিয়ারে এর আগে দেখেননি বলে জানাচ্ছেন। অস্ত্রোপচার সফল হলেও ওই শিশুর সঙ্কট এখনও কাটেনি বলে রবিবার দুপুরে জানান এনআরএসের চিকিৎসকরা।
  • Link to this news (এই সময়)