• মোটা অঙ্কের ‘পেশেন্ট ফিজ’ নিচ্ছেন বিক্ষুব্ধ চিকিৎসকরাই
    বর্তমান | ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিক্ষুব্ধ সিনিয়র ডাক্তাররা পথে নেমেছিলেন। জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে পাও মেলান। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে মদত দিলেও তাঁরা নিজেদের চেম্বার বন্ধ করেননি। কেউ ৪০০, ৫০০ আবার কেউ ৭০০টাকা ফিজ নিয়ে রোগী দেখছেন। এখানেই থেমে থাকছেন না। নিজের পছন্দের ব্র্যান্ডের ওষুধ লিখছেন। নির্দিষ্ট দোকান ছাড়া তা পাওয়া যায় না। রোগী ও পরিজনদের দাবি, এখানেও তাঁদের কমিশন রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা যত ব্যাহত হবে ততই তাঁদের ফায়দা বেশি। বিক্ষুব্ধদের কয়েকজন অবশ্য সরকারি চাকরি আগেই ছেড়েছেন। নিজেরা একাধিক চেম্বারে মোটা টাকা ফি নিয়ে প্র্যাকটিস করেন। কারও কারও আবার নিজস্ব নার্সিংহোম রয়েছে। অনেকের নার্সিংহোমে পার্টনারশিপ রয়েছে। রোগীদের সেখানেও ভর্তির পরামর্শ দিয়ে তাঁরা পকেট ভারী করছেন বলে অভিযোগ। 


    স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন চিকিৎসকও রমরমিয়ে প্র্যাকটিস করছেন। হাসপাতালে তাঁরা বেশিক্ষণ সময় দেন না। কিন্তু খোসবাগানে নিজস্ব চেম্বারে তাঁরা দীর্ঘ সময় কাটাচ্ছেন। তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলেন, এই চিকিৎসকরা নিজেদের চেম্বার বন্ধ রেখে আন্দোলন করলে জানতাম, তাঁরা জুনিয়র ডাক্তারদের ব্যাপারে আন্তরিক। কিন্তু সেটা তাঁরা করছেন না। নিজেদের স্বার্থে জুনিয়র ডাক্তারদের ভুল বুঝিয়ে চলেছেন। কয়েকজন ‘সাদা চুলে’র চিকিৎসক কলকাতার আন্দোলন জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। মানুষ সবই লক্ষ্য করছে। বিক্ষুব্ধরা কোন কোন নার্সিংহোম বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাচ্ছেন, সেটাও তাঁরা খেয়াল রাখছেন। আমজনতা এসবের বিরুদ্ধে জাস্টিস চাইলে তাঁরা যাবেন কোথায়? 


    পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের মেন্টর মহম্মদ ইসমাইল বলেন, বিক্ষুব্ধরা রোগী ধরার জন্য বিভিন্ন এলাকায় দালাল ছড়িয়ে রেখেছেন। তাঁরা একদিনের জন্যও চেম্বার বন্ধ করেননি। অথচ জুনিয়র ডাক্তারদের উস্কে দিচ্ছেন। 


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর আগে বর্ধমান আদালত চত্বর থেকে জুনিয়র ডাক্তাররা মিছিলের ডাক দেন। সেখানে কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসককে দেখা যায়। তবে তাঁরা নিজেদের চেম্বার প্রতিদিনই খুলে রেখেছেন। বর্ধমানের বাসিন্দা কৌশিক দাস বলেন, এই চিকিৎসকরা যদি একটু মানবিক হতেন তাহলে গরিব মানুষের এত দুর্দশা থাকত না। তাঁদের দেখানোর আগেই কাউন্টারে টাকা জমা দিতে হয়। এঁদের অনেকে আবার হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। হাসপাতালে রোগীদের ভালো করে না দেখলেও তাঁরা চেম্বার করেন যত্ন নিয়ে। কারণ চেম্বারে কড়কড়ে টাকা পাওয়া যায়। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে চিকিৎসা করতে আসা রোগীর আত্মীয় শবনম ইয়াসমিন বলেন, নিজেদের ফায়দা লোটার জন্যই একশ্রেণির সিনিয়র চিকিৎসক জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন জিইয়ে রাখতে চাইছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা না হলে তাঁদের লাভ বেশি হবে। জুনিয়র ডাক্তারদের ভালো চাইলে তাঁরা এই কাজ করতেন না। তঁরা যদি জুনিয়রদের প্রতি এতই সহমর্মী হন তাহলে চেম্বার বন্ধ রেখে তাঁরা পথে নামুন।
  • Link to this news (বর্তমান)