গগনাবুড়ির রোষে দিনের বেলাতেও যেখানে যেতে ভয়, সেই পুকুর পরিষ্কার! জয়পুরে রহস্য
বর্তমান | ২১ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: গগনাবুড়ির রোষে পড়ার ভয়। দিনের বেলাতেও পুকুরে যেতে ভয় পান বাসিন্দারা। সেই পুকুরেরই কিছু কিছু অংশ হঠাৎ পরিষ্কার হওয়ায় রহস্য দানা বেঁধেছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে, কেউ পুকুরের দলঘাস সরিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করেছে। কিন্তু, বাসিন্দারা জানাচ্ছেন মাছ ধরা তো দূরের কথা, ওই পুকুরের কাছে দিনের বেলায় যেতেও সাহস লাগে। তাঁদের দাবি, পুজো না হওয়ায় পুকুর পাড়ে থাকা দেবী রুষ্ট হয়েছেন। মালিকপক্ষকে ডেকে ফের দেবীর পুজো শুরুর ব্যবস্থা করা হবে।
জয়পুরের তসড়া গ্রামে প্রায় ২৫ একর জলকর বিশিষ্ট দেবত্র পুকুর রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বড় ওই জলাশয়ে কোনও কালেই মাছ চাষ হয়নি। কয়েক বছর আগে বর্ধমানের এক ব্যক্তি লিজে নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু, নানা অলৌকিক ঘটনার সম্মুখীন হওয়ায় সব ছেড়ে তিনি পালিয়ে যান। তারপর থেকে ওই পুকুর কার্যত মজে গিয়েছে।
রবিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, জঙ্গল অধ্যুষিত তসড়া গ্রাম পেরিয়ে পিচ রাস্তা বরাবর কিছুটা এগিয়ে ঝোপের মধ্যে সরু একটি রাস্তা চলে গিয়েছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই পর্যন্ত রাস্তা চিনিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে যান। আঙুল বাড়িয়ে পুকুরের রাস্তা দেখিয়ে দিলেও তিনি আর গেলেন না। জিজ্ঞাসা করায় সোজা উত্তর ‘মাথা খারাপ? গগনাবুড়ি আছে। আমি মোটেই যাব না’। অগত্যা একাই এগতে হল। রাস্তা দেখলেই বোঝা যায়, সাধারণত কেউ এপথে যাতায়াত করে না। কেবল গোরু চলাচলের কিছু চিহ্ন রয়েছে। বিশাল আয়তনের গগনাপুকুর পাড়ে পৌঁছে দেখা গেল, গোটা পুকুরটি দলঘাসে মজে গিয়েছে। তবে দলঘাস সরিয়ে কেউ বা কারা পুকুরের মাঝ বরাবর গিয়েছে। সেখানে বেশ কিছুটা ঘাস সরিয়ে জল উন্মুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে অন্তত চার পাঁচটি জায়গায় জল উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু, কে বা কারা এবং ঠিক কী কারণে এমনটা করেছে, তা নিয়েই স্থানীয়দের মনে রহস্য দানা বেঁধেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পুকুরের পাড়েই রয়েছে গগনাবুড়ির থান। নির্জন জায়গায় অবস্থিত ওই পুকুরে মাছ ধরা তো দূরের কথা, গগনাবুড়ির পুজো না করে দিনের বেলাতেও ওই পুকুরে নামতে গেলে বুকের পাটা লাগে। গৌতম মেটে বলেন, গগনাবুড়ির রোষে পড়ার ভয়ে আশেপাশের গ্রামের কোনও লোকের ওই পুকুরে মাছ ধরার সাহস হবে না। তার কারণ গগনাবুড়ির পুজো না করে পুকুরে নামলে ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল। এরকম একাধিক উদাহরণ আছে। আমরা মনে করছি, গগনাবুড়ি কোনও কারণে রুষ্ট হয়েছেন। সেই জন্য আমরা গগনাবুড়ির পুজো করার জন্য মালিকদের বলেছি।
ওই পুকুরের মালিকপক্ষে স্থানীয় মোবারকপুরের বাসিন্দা সত্যসাধন কর বলেন, পুকুর পাড়ে ঝোপের মধ্যে গগনাবুড়ির বিগ্রহ রয়েছে। মকরসংক্রান্তির দিন ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে পুজো করা হয়। বংশ পরম্পরা মেনে তা হয়ে আসছে। পুকুরের দলঘাস সরানো নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। কর পরিবারের গৃহবধূ পূর্ণিমা কর বলেন, বছরের একদিন পরিবারের সকলে দল বেঁধে যাই। তবে কেউ একা ওই পুকুরে যায় না।