প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে আসছে কাঁকসার রাজকুসুম গ্রামের বড়কালী ও মুখোপাধ্যায় বাড়ির কালীপুজো
বর্তমান | ২১ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, মানকর: কাঁকসার পুরনো কালীপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম রাজকুসুম গ্রামের মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো। যা ৩০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। মুখোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপুরুষ রামকুমার মুখোপাধ্যায় এই পুজো শুরু করেছিলেন। তখন ছাগ বলি প্রথা ছিল। তবে বর্তমানে কুমড়োর আকারের কদমা বলি দেওয়া হয় এই পুজোতে। পরিবারের সদস্যরা জানান, পরপর দু’বার বলির জন্য নিয়ে আসা ছাগ মারা যায়। পরিবারের সদস্য অন্নদাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় স্বপ্নে দেখেন, দেবী ছাগ বলি করতে নিষেধ করছেন। পরিবারের সদস্যরা তখন মলানদিঘির ব্রাহ্মণদের কাছে বিধান আনতে যান। ব্রাহ্মণরা বলি না দেওয়ার পরামর্শ দেন। সেইবারে মণ্ডা বলি দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে কুমড়ো আকারের কদমা নিয়ে আসা হয় মানকর থেকে। এখনও সেই রীতি পালন করে আসছেন বর্তমান প্রজন্ম। একসময় বংশ পরম্পরায় মায়ের মূর্তি তৈরি করত একটি পরিবার। তবে সেই বংশের কেউ আর মূর্তি তৈরি করছেন না বলে দেবশালার এক কারিগর এই কাজের দায়িত্ব পান। পরিবারের সদস্য উত্তম মুখোপাধ্যায়, সন্তোষ মুখোপাধ্যায়রা বলেন, আগে নিশিপুজো থাকলেও বর্তমানে সন্ধি পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে রীতি মেনে পুজোর দিন সাড়ে সাত কেজি চালের নৈবেদ্য নিবেদন করতে হয় দেবীকে। ভোগে সুজি নিবেদন করা হয়। পুজোর পরের দিনই বিসর্জন হয় দেবীর।
রাজকুসুম গ্রামের বড়কালীর পুজো শুরু করেছিলেন ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রহ্মযজ্ঞের রীতি রয়েছে এখানে। কালীপুজোর আগে এখানে হরগৌরীর পুজো হয়। রাত ১০টায় হরগৌরীর পুজোয় বসেন পুরোহিত। পুজো শেষ করে তারপর নিশিপুজো শুরু হয় বড়কালীর। দেবীকে ৪০ কেজি চালের নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। কালীপুজোয় পুজো ও বলিদানের পর পাঁচজন ব্রাহ্মণকে ভোগ প্রথম নিবেদন করা হয়। ব্রাহ্মণদের পর তা মাকালীকে নিবেদন করা হয়। পরে সাধারণ মানুষ সেই প্রসাদ পান। পরিবারের সদস্য কাশীনাথ মুখোপাধ্যায়, সমর বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, বর্তমানে যেখানে মন্দির আগে সেটি শ্মশান ছিল। গ্রামের রীতি প্রথমে বড়কালীর ছাগ বলি হবে। তারপর সেই একই খাড়ায় গ্রামের অন্যান্য পুজোর ছাগ বলি হবে। যিনি বলি করছেন তিনিই সব মন্দিরে গিয়ে গিয়ে বলি করবেন। স্থানীয় বাসিন্দা মৃন্ময় হোড় বলেন, প্রাচীন এই পুজো ঘিরে উৎসবে মাতেন গ্রামবাসী। পাশাপাশি দূর থেকেও বহু মানুষ আসেন।