নিজস্ব প্রতিনিধি, জঙ্গিপুর: ফরাক্কায় চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে খুন করা হল। মৃতের নাম করিম শেখ(২৮)। বাড়ি ফরাক্কা থানার মহাদেবনগর পঞ্চায়েতের মধ্য মহাদেবনগর গ্রামে। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক শোরগোল পড়েছে। এভাবে সন্দেহের বশে তাঁকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় মৃতের পরিবার সরব হয়েছেন। তাঁরা ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জঙ্গিপুরের পুলিস সুপার আনন্দ রায় বলেন, চুরি করতে গিয়ে ওই যুবক ধরা পড়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। তারপর স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে মারধর করে। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন ধরে ফরাক্কার মহাদেবনগরের গোপালনগর এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছিল। প্রায় দিন চুরির ঘটনায় বাসিন্দারা আতঙ্কে ছিলেন। শনিবার ভোররাতে ওই যুবককে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তাতেই বাসিন্দাদের একাংশের সন্দেহ হয়। ওই যুবককে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাসিন্দারা। সদুত্তর দিতে না পারায় তাঁকে পাকড়াও করে বেধড়ক মারধর করে গ্রামবাসীরা। ঘটনাস্থলেই করিম রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ছটফট করতে থাকেন। নৃশংস এই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। যদিও গ্রামবাসীদের তোলা সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ‘বর্তমান’।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভোরের অন্ধকার থেকে ক্রমশ সকালের আলো ফুটছে। মাটিতে লুটিয়ে ছটফট করছেন করিম। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। মারের চোটে করিমের পরনের গেঞ্জি ছিড়ে গিয়েছিল। ওইভাবেই তিনি দীর্ঘক্ষণ পড়েছিলেন। বিষয়টি পুলিসের কানে যেতেই তৎপর হয়। পুলিস গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। তখনও তাঁর শ্বাস চলছিল। পুলিস আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শনিবার জঙ্গিপুর হাসপাতালে ওই যুবকের ময়নাতদন্ত হয়। তারপর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিস।
চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক শোরগোল পড়েছে। যুবকের পরিবারের দাবি, রাজমিস্ত্রির কাজ করত করিম। সংসার চালাতে আরও পাঁচরকম কাজ করত। তবে চুরির অভিযোগ একেবারে ‘ভিত্তিহীন’। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মৃতের পরিবার ও প্রতিবেশীরা। শুধু সন্দেহের বশে এক যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনা নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন।
মৃতের পরিজনদের দাবি, করিম সেখানে কী উদ্দেশে গিয়েছিল আমরা জানি না। ও পেশায় রাজমিস্ত্রি। সন্দেহের বশে এভাবে কাউকে কি পিটিয়ে মারা যায়? করিমের স্ত্রী ও তাঁর সন্তানদের দায়িত্ব এখন কে নেবে? যারা এই নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই। পুলিস দোষীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিক। গণপিটুনির ঘটনায় পুলিস এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।