• পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে জোর ধাক্কা 
    বর্তমান | ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান। শুক্রবার আসানসোলে জেলা কার্যালয়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযান নিয়ে বৈঠক করেন বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার। সেখানে উঠে আসে অভিযানের কঙ্কালসার দশা। পশ্চিম বর্ধমান জেলার ন’টি বিধানসভা এলাকার মধ্যে মাত্র দু’টি বিধানসভা এলাকায় এক হাজারের বেশি নতুন সদস্য সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বারাবনি ও পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকায়। জানা গিয়েছে, বারাবনি বিধানসভায় এলাকায় মাত্র ৩৪৩ জন নতুন সদস্য হয়েছে বিজেপির। পান্ডবেশ্বরে সেই সংখ্যা মাত্র ৩৬০। অথচ, জেলার তিনটি বিধানসভা এলাকায় বিজেপির বিধায়ক।


    তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, তিন বিধায়কের মধ্যে দু’জনই আবার সংগঠনের শীর্ষপদে দায়িত্বে। তাঁদের জেলার এক নেত্রী তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা। অন্যজন, রাজ্য সম্পাদক। তাতেও যে বিন্দুমাত্র হাল ফেরেনি সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ অভিযান থেকে স্পষ্ট। ব্যর্থতা ঢাকতে কোনও কোনও নেতা অজুহাত হিসেবে খাড়া করলেন দুর্গাপুজোর ব্যস্ততাকে। অনেকে আবার দাবি করলেন, আরজিকর কান্ডের জেরে এই অভিযান আমরা চালু করিনি। বিজেপির দাবি যাইহোক না কেন, কটাক্ষ উড়ে এসেছে শাসকদলের তরফে। 


    বাংলার যে কয়েকটি জেলা বিজেপিকে অক্সিজেন জোগায় তার মধ্যে অন্যতম পশ্চিম বর্ধমান জেলা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেলার দু’টি লোকসভা  জয়লাভ করেছিল বিজেপি। এমনকী, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে প্রবল মমতা ঝড়ের মধ্যেও জেলার ন’টি আসনের মধ্যে তিনটি বিধানসভায় জয়লাভ করেছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। তারপর থেকে সংগঠন মজবুত হওয়ার হওয়ার বদলে রসাতলে গিয়েছে। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা নেতাদের সঙ্গে আদি বিজেপি নেতাদের মতপার্থক্য, উভয়ের মধ্যে তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অযোগ্য নেতাদের প্রাধান্য পাওয়া অনেক প্রবীণ নেতা-কর্মী মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন। তাতেই ধাক্কা খাচ্ছে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান। 


    বিজেপির জেলাস্তরের এক নেতা সদস্য সংগ্রহ অভিযানের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। রাজ্যস্তরের নেতারা বারবার নতুন সদস্য সংগ্রহের উপর জোর দিচ্ছেন। আর না হওয়ায় রুষ্ট হচ্ছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বারাবনি বা পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকায় নয়, জেলার প্রতিটি বিধানসভা এলাকাতে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গতি নেই। দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা এলাকায় ৫২০ জন, দুর্গাপুর পশ্চিম  বিধানসভা এলাকায় ৯৭৭, রানিগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় ৭৮১, জামুড়িয়া বিধানসভায় ৫০৬, আসানসোল দক্ষিণে এক হাজার ২৭৩ জন আসানসোল উত্তরে ১ হাজার ৭২৮ জন বিজেপির নতুন সদস্য হয়েছেন। কুলটিতে এখনও পর্যন্ত নতুন সদস্য হয়েছেন ৫৯১ জন। 


    আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক অভিজিৎ রায় বলেন, বাঙালি সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। পুজোর জন্য অনেকে ব্যস্ত ছিলেন। তাই সদস্য সংগ্রহ অভিযান গতি পায়নি। এছাড়া বারাবনি ও পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকায় শাসক দলের চাপা সন্ত্রাস রয়েছে। গতবারে যারা সদস্য হয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি অত্যাচারও হয়েছে। 


    বিজেপির কাছে সবচেয়ে উদ্বেগের দুর্গাপুর পশ্চিম, কুলটি ও আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের পরিসংখ্যান। বিধানসভা এলাকাতেই বিজেপির বিধায়ক রয়েছেন। একটি নির্দিষ্ট নম্বরে মিসকল দিলেই বিজেপি দলের সদস্যপদ পাওয়া যায়। তাও বিজেপির সদস্য হতে মানুষের আগ্রহ নেই। ২৪ অক্টোবর অমিত শাহ কলকাতায় আসছেন ক্লাস নিতে। এই পরিসংখ্যান নিয়ে তাই থরহরিকম্প বিজেপি নেতৃত্ব। 


    দুর্গাপুর পশ্চিমে বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই বলেন, আগস্ট মাস থেকে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও সেপ্টেম্বর মাসে আর জি কর ঘটনা ঘটে। সদস্য সংগ্রহ অভিযান বন্ধ ছিল। অমিত শাহ অনুষ্ঠানের পর আমরা জোরকদমে তা শুরু করব। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাসু বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সকল মানুষ উপকৃত। কোনও মানুষই এখন আর  বিজেপি কিংবা সিপিএমের সদস্য হতে চায় না। 
  • Link to this news (বর্তমান)