সংবাদদাতা, মেখলিগঞ্জ: আশ্বিন পেরিয়ে কার্তিক মাস শুরু হয়েছে। কিন্তু, উত্সবের আবহ কাটেনি। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজ মেতেছে মাতৃ বন্দনায়। দশমী তিথিতে মর্ত্যলোক থেকে কৈলাসে সপরিবারে ফিরেছেন মা দুর্গা। কিন্তু, উত্তরবঙ্গে রাজবংশী সমাজ মা দুর্গাকে এখনও বিদায় দেয়নি। একাদশী তিথি থেকে মা ভাণ্ডানি নামে তিনি সর্বত্রই পূজিতা হচ্ছেন। কোথাও দু’দিন, কোথাও পাঁচ দিন ধরে চলেছে ভাণ্ডানি দেবীর আরাধনা। এই পুজো উপলক্ষ্যে উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে মেলা বসেছে। ময়নাগুড়ির বার্নিশ, মাথাভাঙার কেদারহাট, মেখলিগঞ্জের রানিরহাটের ভাণ্ডানি পুজো ও মেলা বেশ বিখ্যাত। রানিরহাটে ভাণ্ডানি পুজো উপলক্ষ্যে এখনও চলছে এই মেলা। এবারের পুজো কমিটির সভাপতি উৎপল রাউত বলেন, সোমবার রাত পর্যন্ত মেলা চলবে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রানিরহাটের ঐতিহ্যবাহী ভাণ্ডানি মেলায় গিয়ে মায়ের আশীর্বাদ নিয়েছেন ধূপগুড়ির বিধায়ক নির্মলচন্দ্র রায়, মেখলিগঞ্জের বিধায়ক পরেশচন্দ্র অধিকারী, প্রাক্তন সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন সহ অনেকে। রানিরহাটের এই ভাণ্ডানি মেলায় রোজই ভিড় হচ্ছে। রবিবারও ভিড় উপচে পড়ে।
মা দুর্গার আরেক রূপ ভাণ্ডানি দেবীর মূলত দু’টি হাত। কোথাও আবার চারটি। নিরস্ত্র, ব্যাঘ্র বাহিনী ও বর্ণ রক্তিম। তিনি সাধারণত পশ্চিম মুখে বসেন। তবে সময়ের সঙ্গে দেবীর গড়নে পরিবর্তনও এসেছে। দেবীর বাহন সিংহ। মা ভাণ্ডানি কোথাও কোথাও ‘ভাণ্ডারনি’ নামেও পরিচিত। কোথাও আবার বনদুর্গা নামে কল্পনা করেও দেবীর পুজো হয়।
শারদ উৎসব শেষে বর্তমানে ভাণ্ডানি পুজো ও মেলা ঘিরে ব্যাপক আনন্দে মেতে উঠেছেন রানিরহাটবাসী। পুজোর উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই পুজো। বর্তমানে এখানে প্রতিবছর স্থায়ী পাকা মণ্ডপে মায়ের বন্দনা হয়। মণ্ডপে অধিষ্ঠিত দেবী প্রতিমাও স্থায়ীভাবে বসানো। এই পুজোয় শুরু থেকেই বলি প্রথা প্রচলিত। ইতিমধ্যেই কয়েকশো পায়রা এবং শতাধিক পাঁঠা উৎসর্গ করা হয়েছে।