সংবাদদাতা, করণদিঘি: দুর্গাপুজোর বিসর্জনের সুর এখনও কাটেনি। মণ্ডপের কাঠামো খোলার কাজ চলছে। এর মাঝে নতুন করে দেবী দশভূজার পুজোর আয়োজনে ব্যস্ততা তুঙ্গে করণদিঘি ব্লকের সিঙ্গারদহ গ্রামের বাসিন্দাদের। এখানে দুর্গা মায়ের পুজো হয় ‘সোনামতি কুম্ভরানি’ নামে। এবারও রীতি মেনে শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো ও চারদিনের মেলার আয়োজন হয়েছে। সিঙ্গারদহ পুজো ও মেলা কমিটির সদস্য যদুনন্দন সিংহ বলেন, প্রথা অনুসারে দুর্গাপুজোর বিসর্জনের পর প্রথম মঙ্গলবার এখানে দেবী দুর্গার পুজো হয়। সেই অনুযায়ী ২২ অক্টোবর পুজো হবে। আমার বাবা, ঠাকুরদা এই পুজো করেছেন। কবে থেকে শুরু হয়েছে, সেটা তাঁরাও বলতে পারেননি। কেউ কেউ বলেন পাল বংশের রাজত্বকালে পুজো শুরু হয়েছিল। আবার অনেকের কথায়, সম্রাট অশোকের সময় থেকে চলে আসছে।
বাসিন্দাদের দাবি, সোনামতি কুম্ভরানি নামে পুজো হলেও প্রতিমায় কিন্তু দেবী দুর্গার সঙ্গে কোনও পার্থক্য নেই। দেবী এখানে দশভূজা। সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী সবাই থাকেন। এখানকার পুজো নিয়ে লোকমুখে বিভিন্ন কথা প্রচলিত আছে। কেউ বলেন, দেবী দুর্গার কয়েকজন বোন আছেন। তাঁদের মধ্যে একজন সোনামতি কুম্ভরানি। তিনি মা দুর্গার ছোট বলে দেবীর বিসর্জনের পর এই পুজো হয়।
কথিত আছে, কুমোর পরিবারের বধূ ছিলেন সোনামতি। সোনামতি ও পাড়ার অন্য বধূরা মেলায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। সোনামতি সাজগোজে ব্যস্ত ছিলেন। প্রতিবেশী বধূরা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু অনেকক্ষণ প্রতীক্ষার পরেও সোনামতি ঘর থেকে বের হচ্ছেন না দেখে প্রতিবেশী বধূরা ঘরে ঢোকেন। তাঁরা দেখেন, সোনামতির পরিবর্তে দেবী দুর্গা দাঁড়িয়ে আছেন। সেই থেকে পুজো শুরু হয়।
সোনামতি কুমোর পরিবারের বধূ ছিলেন বলে পুজোর নাম হয় সোনামতি কুম্ভরানি। মূলত রাজবংশী সমাজের লোকজন পুজোর আয়োজন করে থাকেন। পাঁঠা ও পায়রা বলি দেন অনেকে। মানত করে পুজোও দেওয়া হয়।