ঘরে-বাইরে একমাস ধরে জমে জল, চাষ নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা
বর্তমান | ২১ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, বনগাঁ ও বসিরহাট: দুর্গাপুজো এসেছে, আবার চলেও গিয়েছে। টের পাননি বনগাঁ বা স্বরূপনগরের একটা বড় অংশের বাসিন্দা। তাঁদের ঘরে-বাইরে প্রায় একমাস ধরে জমে রয়েছে জল। ঘর থেকে জল ছেঁচে ফেলতে আর নৌকা-ভেলা করে যাতায়াত করতেই সময় চলে গিয়েছে তাঁদের। অনেকে আবার বাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে গিয়ে উঠতে বাধ্য হয়েছিলেন। এখনও সেখানেই আছেন। সেভাবে অনুভব করতে পারেননি উৎসবের আনন্দ বা আর জি কর নিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের উত্তেজনা। এই অবস্থায় আবার নতুন করে নিম্নচাপ তৈরি হবে বলে পূর্বাভাস মিলছে। ইতিমধ্যে জীবিকায় কোপ পড়েছে। ডুবে গিয়েছে ধান, সব্জি। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ফুলচাষিদের। পুজোর আগে থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে শুধু বনগাঁ মহকুমাতেই কয়েক হাজার হেক্টর জমি জলের তলায়। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জমিতে জল দাঁড়িয়ে আছে। শীতের সব্জি চাষের সময় চলে এলেও প্রস্তুতি নিতে পারেননি ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। এর উপরে ফের বৃষ্টি হলে হাল কী হবে, ভাবতে পারছেন না তাঁরা।
গাইঘাটা সুটিয়ার বাসিন্দা চন্দন বিশ্বাস বলেন, জল সরার কোনও রাস্তা নেই। রোদের উপর ভরসা করে থাকতে হবে। জল সরলে জমিতে আলুচাষ করব। জানি না কবে সেটা করতে পারবো। তবে সকলেই চন্দনবাবুর মতো রোদের উপর ভরসা করে থাকতে রাজি নন। রবিবার দুপুরে যেমন হয়ে স্বরূপনগর ব্লকের ইছামতী ও যমুনা নদীর পার্শ্ববর্তী টিপির ঘাট এলাকার নদীর বাঁধ কেটে জল সরানোর ব্যবস্থা করলেন কয়েকটি পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার মানুষ।
রবিবার গাইঘাটার মানিকহীরা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার উপর দিয়ে জল বইছে। চারদিকে মাঠঘাট জলের তলায়। স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত বসাক বলেন, বাড়িতে জল উঠেছে একমাসের বেশি হয়ে গেল। অন্যের জমি ভাগে চাষ করি। এবার শীতের ফসল আর হবে না। জমিই প্রস্তুত করতে পারব না সময় মতো। বনগাঁর এক কৃষক সঞ্জিত ভৌমিক বলেন, জমিতে এখনও জল। আবার নতুন করে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে শুনছি। শীতের ফসল আর হবে না এবার। বনগাঁর এক কৃষি আধিকারিক বলেন, জমিতে যেভাবে জল দাঁড়িয়ে আছে তাতে একমাসেরও বেশি সময় লাগবে জমি শুকনো হতে। এরপর শীতের মরশুমের ফসল চাষ করবেন কৃষকরা। ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাঁদের। কৃষকদের মতে, যা অবস্থা তাতে জল সরলেও চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে সময় লাগবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গাইঘাটা ব্লকে। ব্লকের ছয়টি পঞ্চায়েত এক প্রকার জলের তলায়। এখনও ত্রাণ শিবিরে বহু মানুষ। উত্তর ২৪ পরগনার সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, জল জমে থাকা এলাকার বাসিন্দাদের জন্য আমরা ত্রাণের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ইছামতী ও যমুনা নদীর সংস্কারের কথাও জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে স্বরূপনগরের যেসব বাসিন্দারা জল সরানোর ব্যবস্থা করেছেন, আমরা তাঁদের পাশে আছি। আগামী দিন কীভাবে ওই এলাকা থেকে জল সরানোর ব্যবস্থা করা যায়, সেই নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।